মাত্র ১৫ বছর বয়সেই জলবায়ু কর্মী ! তোমরা কি জানো সে কে? ঠিক ধরেছ, সে হলো সুইডেনে বসবাসকারী গ্রেটা থুনবার্গ। ২০১৮ সালে গ্রেটা থুনবার্গ মাত্র ১৫ বছর বয়সে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অবিলম্বে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুইডেন সংসদের বাইরে প্রতিবাদ শুরু করে। যেখানেই সে ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধির আশংকা দেখতে পেত সেখানেই তা নিরসনের জন্য আহ্বান জানাত।
জলবায়ুর আশংকাজনক পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত হওয়ায় গ্রেটা ব্যক্তিগতভাবে এর প্রতিবাদ শুরু করে। এতে সে মিডিয়ার নজরে আসে এবং সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলে। অতপর সে জলবায়ু নিয়ে আন্দোলনে নেমে পড়ে। সে এজন্য স্কুল অবরোধের ডাক দেয়। যখন তার স্কুলে সময় কাটানোর কথা, তখন সে পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন করছিল। এতে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ অনুপ্রাণিত হয়। তার কার্যক্রমের মাধ্যমে সে বিশ্ব দরবারে একজন জলবায়ু কর্মী হিসেবে নিজের জায়গা দখল করে নেয়।
গ্রেটার ব্যক্তিগত জীবনে অ্যাসপারজার্স সিনড্রোম রয়েছে, যা এক ধরনের বিকাশগত ব্যাধি। কিন্তু তা কখনোই তার লক্ষ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। সম্প্রতি সে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছে।
তোমরাও কিন্তু গ্রেটার মতো পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারো, ছোট কিংবা বড়। আমাদের পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলেরই। পরিবেশের প্রতি বিরুপ প্রভাব ফেলে এমন কাজ করা থেকে যদি আমরা বিরত থাকতে পারি তাহলে পরিবেশ অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত হবে। ছোট থেকেই পাঠ্যপুস্তকে আমরা পড়ে এসেছি পানি দূষণ, মাটি দূষণ ও বায়ু দূষণ কিভাবে হয়, তা রোধে আমাদের করণীয় কি। কিন্তু তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগের কথা আমরা কজনই বা ভেবেছি?
আমরা অনেকেই ভাবি, “রাস্তায় আমি একা ময়লা না ফেললে কি দূষণ কমে যাবে? বাকিরা তো ফেলছেই !” কিন্তু এটি ভুল। প্রত্যেকেই যদি একই কথা ভাবে তাহলে কখনোই পরিবেশ রক্ষা সম্ভব নয়। যার যার দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হবে। আমাদের সব সময়ই মনে রাখতে হবে পরিবর্তনের শুরুটা কিন্তু নিজে থেকেই। গ্রেটা থুনবার্গও যদি এমন কিছু ভাবত যে একাই আন্দোলন করে কি হবে তাহলে কি পরিবেশ রক্ষায় সে ভূমিকা রাখতে পারত? যে কোনো বড় পদক্ষেপের শুরুটা হয় ছোট ছোট পদক্ষেপ থেকেই।
“ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল”।
আমরাও যদি ছোট থেকেই পরিবেশবান্ধব গুণগুলো নিজেদের মধ্যে আয়ত্ত করতে পারি তাহলে একটা সময় পর ঠিকই আমাদের ব্যক্তিত্বে সেগুলো ভালো অভ্যাস হিসেবে স্থান করে নিবে। আর তার শুরুটা হতে পারে ঘর থেকেই। যেমনঃ
- – আমরা প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের ব্যবহার সীমিত করতে পারি।
- – পলিথিনের ব্যবহার বাদ দিতে না পারলেও কিছুটা তো কমাতেই পারি।
- – আমরা অনেক সময় ঘরে ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও জানালার বাহির দিয়ে ময়লা ফেলি, এটা পরিবেশের জন্য অনুকূল নয়। বাসাটা যদি আমাদের নিজেদের হয় তাহলে পরিবেশটাও আমাদেরই। আর একই সাথে নিজেদের দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে অন্যদেরকেও উদ্বুদ্ধ করাটা খুবই জরুরী।
- – আমাদের ঘরে সবারই ডাস্টবিন থাকে কিন্তু বাহিরে হয়ত সব জায়গায় ডাস্টবিন সহজলভ্য নয়। সেক্ষেত্রে এ বিষয়টাকে অজুহাত বানিয়ে আমরা যেন যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলি। যতটুকু সম্ভব জিনিসগুলো একত্র করে পরবর্তীতে সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলার অভ্যাস করতে হবে। ডাস্টবিনে ফেলার পরিবর্তে যেন ড্রেনে না ফেলি সে কথাও মাথায় রাখতে হবে।
- – যত্রতত্র কফ-থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- – আবর্জনা পোড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে, অন্যভাবে নিষ্কাশন করার উপায় অবলম্বন করতে হবে।
- – বৃক্ষ নিধন বন্ধ করার ক্ষমতা আমাদের হাতে পুরোপুরি না থাকলেও বৃক্ষরোপণ কিন্তু সম্ভব। এছাড়া বৈষ্ণিক উষ্ণতার হার কমিয়ে আনতে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে।
পরিবেশ যেহেতু আমাদের, করণীয়গুলোও আমাদেরই। এ কথা গুলো ছোট থেকে পড়তে পড়তে আমরা বড় হচ্ছি। কিন্তু মেনে চলার অভ্যাস করতে ও পৃথিবীর সুস্থতা বজায় রাখতে গ্রেটার পদক্ষেপ হতে পারে আমাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পরিশেষে মনে রাখতে হবে “নিজে বদলালে, বদলাবে সমাজ”।
লেখাটি নিয়ে মতামত