স্বপ্নের ঘোর কাটানো যতটা কঠিন ততটাই সহজ স্বপ্নের দিকে চলার পথের ছবি আঁকা। রঙ-তুলির ছোঁয়ায় স্বপ্নকে নিজের মতো করে ফুটিয়ে তোলা নিঃসন্দেহে আপনমনের নিখুঁত কারুকাজ। বাতাসের মৃদু হাওয়া যখন গায়ে এসে লাগে তখন স্বপ্নে বিভোর থাকা শিশু-কিশোরও চোখ বন্ধ করে সেই অনুভূতিটা উপলব্ধি করে। এতে করে কিন্তু আবার স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার জন্য স্বপ্নের মধ্যে কোনো রকম আঁচড় পড়তে দেয় না।
“স্বপ্ন খুব জোড়ালো এক শক্তি”-এটা আমি বিশ্বাস করি! তোমাদের কাছেও কি তাই? কারণ, দেখো কেউ যদি তার এগিয়ে চলার জন্য নিজের আকুল সেই মনে স্বপ্ন বুনে থাকে তাহলে সেটা পূরণ করার জন্য ইচ্ছেশক্তি,আকাঙ্ক্ষা শক্তি আরও দৃঢ় হতে থাকে এবং প্রবল ঝড় হয়ে গেলেও যেন সেই শক্তিকে ভেঙ্গে চুরমার করার সাধ্য থাকে না। সকাল হলেই ব্যাগ কাঁধে নিয়ে পরিচিত রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মাঝেও থাকে বিশাল এক স্বপ্ন। কেননা যে পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার প্রচেষ্টা সেই স্থানটা থেকেই শিক্ষাটা পুঁজি করে, জানার অংশকে পরিপূর্ণ করে, অজানার ভাগটা খালি করে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নের দিকে হাত বাড়ানোর স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে।
শিশু-কিশোররা সবসময় চায় তার দেখা স্বপ্নকে যেন সবাই সমর্থন জানায় এবং সহযোগিতা করে সেই পথে এগিয়ে যেতে। কারণ তারা সমর্থন করাকে ভালোবাসে, আপন মনে করে। একা চলার পথে বরাবরই তাদের ভীতি রয়ে যায় তবে সাহসিকতার কোনো কমতি থাকে না তাদের মাঝে। বিকালের খেলার মাঠ থেকে স্বপ্নবাজ শিশু-কিশোরের মনে আরেক স্বপ্নের সৃষ্টি হতে থাকে। এ যেন মাঠ নয় স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার বিশাল এক বলয়ক্ষেত্র। মাঠের চারপাশ হলো স্বপ্নকে ঝড়ে পড়তে না দেওয়ার আস্তর আর মাঠের মাঝখানটুকু হলো স্বপ্নের এপিঠ-ওপিঠকে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে ঝালাই করে নেওয়ার অদ্ভুত এক নিজস্বতা।
একটি পাতা যখন জন্ম নেয় তখন একই রঙের থাকে কিন্তু বয়সের ছাপ সবকিছুর মধ্যেই থাকে। তাই সেই পাতাটিকেও যদি আমরা কয়েকদিন পর নজরে নিই তাহলেই বুঝতে পারব এটা শৈশব নাকি কৈশোর নাকি বয়স্কের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। যদি আমাদের উপলব্ধি করার জ্ঞান থেকে থাকে তাহলে খুব সহজেই বোঝা যাবে। ঠিক তেমনই একটি মানুষ জন্ম নেওয়ার পর থেকে থাকে শিশু, এরপর কিশোর তারপরে প্রাপ্তবয়স্ক, ঠিক তারপরেই বৃদ্ধ এবং এই পরিবর্তন কিন্তু তাকে দেখলেই বোঝা যায় এবং শৈশব থেকে বয়স্ককালীন সময়ে চিন্তাভাবনায় থাকে বিশাল ফারাক! সেইসাথে স্বপ্নেও থাকে নানান রকম ভিন্নতা।
রাতের অন্ধকারে সবকিছু কালো দেখলেও স্বপ্নবাজ সেই শিশু-কিশোর কিন্তু তার স্বপ্নকে বাস্তকে রূপ দেওয়ার জন্য কালোর মাঝেও আলো খুঁজে পায় খুব সহজেই। আলোড়নে ছড়িয়ে পড়ে চারদিক এবং অন্ধকারের রেশ কাটিয়ে পৌঁছে যায় স্বপ্ন পূরণের এক একটি কঠিন পদক্ষেপ পাড়ি দিয়ে স্বপ্নকে ছুঁইছুঁই সেই অবস্থানে। ছোট হোক বা বড় যার যার কাছে তার স্বপ্নের স্থান সবচেয়ে উঁচু স্থানেই থাকে। মানুষ তার সাধ্যের বাহিরে কিছু ভাবতে বা করতে পারে না। আবার অনেকে করতে চায় কিন্তু পরিস্থিতির পিছুটানের কবলে পড়ে সেটা আর করাও হয় না। কিন্তু সাধ্যের মধ্যে থাকা স্বপ্নটাই পূরণের জন্যে থাকে বিভিন্ন রকম ব্যস্ততা।
বয়সের ভারে মানুষের ধৈর্যের মধ্যেও জং ধরতে শুরু করে দেয় অথচ সেই মানুষটা কিন্তু বিশাল বিশাল স্বপ্নের জাল বুনেছিল তার আকুল মনে। বিষয়টা একটু অদ্ভুত না? মানুষ কিন্তু একই কিন্তু শৈশব থেকে বৃদ্ধ হওয়ার যাত্রায় সব কিছু কতটা ভিন্ন। আসলেই এটা দুনিয়ার এক অলৌকিক নিয়ম বলা চলে। একটি শিশু তার স্বপ্ন পূরণে থাকে অটুট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তার মাঝে তৈরি হয় পরিশ্রম করার অবিশ্বাস্য এক অন্যরকম নিশ্চয়তার আগ্রহশক্তি। তারুণ্যের জয়ধ্বনি শৈশব থেকে তাদের মধ্যে জাগ্রত হতে থাকে, বেড়ে উঠতে থাকে লড়াই করার, নিজের জায়গাকে ধরে রাখার আত্মবিশ্বাস।
একটা ইলেকট্রনিক পাখা যখন ফুল স্পিডে ঘুরতে থাকে তখন সেই পাখাটার দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় আমার স্বপ্নগুলোও যদি এই স্পিডে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারত তাহলে আমার কতগুলো স্বপ্ন খুব সহজেই এবং কম সময়েই পূরণ হয়ে যেত কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণই আলাদা। এটা বোঝার ক্ষমতা শিশু-কিশোর সকলেরই আছে তবে স্বপ্নবাজ শিশু-কিশোর সকল স্বপ্ন দেখতে পারে। এতে কোনো বাধা নেই, কিন্তু ঘুমের ঘোরের স্বপ্নে পিছু পিছু না ছুটে চোখ মেলে দেখা স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলাই শ্রেয়।
প্রবল ইচ্ছেশক্তি, সেই সাথে অদম্য চিন্তাধারার মন-মানসিকতাই যেন স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি সঙ্গ দেয়। এভাবেই যেন স্বপ্নবাজ শিশু-কিশোরদের স্বপ্ন অনায়াসেই পূরণ হয়ে যায় খুব কম সময়ের ব্যবধানেই।
লেখাটি নিয়ে মতামত