সকলেই জেনে থাকবো বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগ ।বর্তমান যুগে প্রযুক্তির উদ্ভাবন মানুষের জীবনযাত্রা র মান পরিবর্তন করে দিচ্ছি। এই প্রযুক্তির যুগে সোশ্যাল মিডিয়া র গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। আমরা কম বেশি সবাই এই সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে যুক্ত আছি। কিন্তু একটা শিশুর জন্য এসব সোশ্যাল মিডিয়া আদৌ কি সুফল বয়ে আনছে, নাকি তাদের মস্তিষ্কের অবনতি করছে দিনের পর দিন। এই বিষয়ে অনেক অভিভাবকরা এখনো সচেতন না।
ইদানিং লক্ষ্য করা যায় প্রায় শিশুর হাতে স্মার্টফোন।যখন শিশুটি আপনার স্মার্টফোন টি হাতে নেয় তারা ইউটিউব এ কার্টুন দেখে থাকে তখন ইউটিউব নিজে নিজে টেপাটিপি করে সে একসময় নিজের অজান্তেই কোথায় কোথায় চলে যাচ্ছে সেটি কি আপনি জানেন? আজকাল ১০ বছর বয়সের মেয়েটি ফেইসবুক , ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে সেটি সম্পর্কে আপনি জানেন কি? কিংবা ১২ বছরের ছেলে বা মেয়েটি সাইবার বুলীং এর শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত, আর ফলে তাদের ওপর এক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে।
কোনো এক গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়, ইউনিসেফ বাংলাদেশ ১০-১৭ বছরের শিশুদের উপর একটা স্টাডি করেছে কিছুদিন আগে। ‘বাংলাদেশের শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা’ – এই স্টাডিতে উঠে এসেছে যে বাংলাদেশের ২৫% শিশু ১১ বছর বয়সের আগেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা শুরু করে। ভয়ের বিষয় হল যে ৩২% শিশু সাইবার ব্যুলিং এর শিকার হয়, ১৯% শিশু নানা ধরণের খারাপ মেসেজ পায়, ১২% শিশু পর্ণগ্রাফিক ছবি এবং ভিডিও পায় ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার সময়।
আপনি যদি এই বয়সের শিশুর অভিভাবক হয়ে থাকেন তাহলে জানার চেষ্টা করুন আগে তাদের কোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল আছে কি না। সে হয়তো ভয়ে আপনাকে বলতে চাইবে না তাকে অভয় দিয়ে জানতে হবে সত্যিটা। কারণ স্টাডি বলছে যে ৩০% শিশু যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে একটিভ তারা জানেই না বেসিক সেফটির দিক সম্পর্কে অবহিত না বা তারা জানেই না কিভাবে করতে হয়।
নিজের প্রোফাইলের পাসওয়ার্ড অন্য কারো সাথে শেয়ার না করে যারা বিভিন্ন খারাপ মেসেজ দেয় তাদের ব্লক করা এইসব নিয়ে অনেক শিশুর ধারণা কম। তাই অভিভাবক হিসেবে আপনার শিশুটিকে এই বিষয়ে সতর্ক করুন ।আপনার দেওয়া কিছু সময় আপনার শিশুরা চরম ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে পারবে। যাদের শিশুরা এখনও ছোট কিন্তু প্রতিদিন ইউটিউব দেখছে, তাদের হাতে ফোনটি দেয়ার আগে আপনার ইউটিউব কি প্যারেন্টাল লক করেছেন? না করলে সাথে সাথে করে ফেলুন।
ইউটিউব শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করেছে শিশুদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে।শিশুদের ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিয়ে কিডস টাইম ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। অভিভাবকদের তাদের শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট দেয়ার ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি, অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় স্কিল দেয়া এবং সরাসরি শিশুদের সাথে এই ব্যাপারে কাজ করার জন্য কিডস টাইমের মূল প্রতিষ্ঠান Light of Hope Ltd. যোগ দিয়েছে MommyDaddyMe এর সাথে।
অভিভাবকরা MommyDaddyMe app ডাউনলোড করতে পারেন Google Store থেকে। সেখানে শিশুদের উপযোগী কনটেন্ট, S-Factor, Scolastic এর বিভিন্ন বই, শিশুদের Encyclopedia থেকে শুরু করে শিশুদের নিজেদের অ্যাকাউন্ট (যা অভিভাবক নিজেই খুলে দিতে পারেন) এবং অভিভাবকের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থাকে। শিশু কিশোর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার সময় অনেক ঝুঁকি তে পড়তে পারে। তারা না বুঝে অনেক কিছু করে ফেলে যার ফলে পরবর্তীতে ভোগাক্রন্টির শিকার হতে হয় এসব শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সতর্ক করতে হবে। শিশুকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সময় সচেতন করতে না পারলে তারা এক চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে যার প্রভাব বর্তমান সমাজের উপর পড়বে।
বর্তমান প্রযুক্তিতে সোশ্যাল মিডিয়া অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত কিন্তু এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বয়সটি বিবেচনায় আনা প্রয়োজন ।কারণ সকল বয়সের শিশুদের জন্য সকল কন্টেন্ট কার্যকর না হতে পারে আবার কিছু কন্টেন্ট তাদের মস্তিষ্কে খারাপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাই আপনার শিশুটি যখন সোশ্যাল মিডিয়া র সাথে যুক্ত হয়েছি কি না জানার চেষ্টা করুন, যদি দেখেন হ্যাঁ যুক্ত তবে তাকে সচেতন করুন ।বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বুঝিয়ে বলুন। বয়স উপযোগী কন্টেন্টের সাথে যোগ সূত্র করিয়ে দিন ।
বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও খেলাধুলা এসবের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলুন।আর অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনার শিশুটি প্রতিদিন কি করছে তার কাজের আপডেট নেওয়ার চেষ্টা করুন।সর্বোপরি তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখুন।এর ফলে দেখবেন আপনার শিশুটি আপনার সাথে তার প্রতিদিনের ঘটনা গুলো শেয়ার করছে। যার মাধ্যমে আপনি আপনার শিশুটির প্রতিদিনের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন।
তাই প্রতিটি শিশুর জন্য নিরাপদ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিশ্চিত করুন ।
লেখাটি নিয়ে মতামত