এক হাঁটু গেড়ে শচীন একটা ছয় মেরেছিলেন, কাম্বলিও দেখে থাকার পাত্র নয় একদম। পরের ওভারে সে ও হাঁটু গেড়ে ধামাকা এক ছয় হাঁকিয়ে দিলেন। শচীন করলেন ৩২৬, তো কাম্বলিও ছাড়ার পাত্র না মোটেও। তাঁর ঝুলিতে জমা হয় ৩৪৯ রান। নাহ, দু’জনের কাউকেও আর আউট করা যায় নি। বেচারা বোলার বাহুতুলে এখনও দুঃখের সাথে সেই স্মৃতি রোমন্থন করে বেড়ান। তবে দুঃখের মাঝেও সেখানে সুখের ঝিলিক খেলে যায়। দুইজন তারকা ব্যাটসম্যান সেদিন রেকর্ড বুকে নাম করে নেন। পরে একজন তো হয়ে উঠেন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।
বলছিলাম হ্যারিস শীল্ড ক্রিকেট টুর্নামেন্টের কথা। আগের ৬৪১ রানের রেকর্ড সেদিন শচীন -কাম্বলির হাতে ভেঙ্গে খানখান হয়। ৬৬৪ রানের অনন্য এক নজির দেখে আজাদ ময়দান। যে কোন ধরনের ক্রিকেটে যা আজও সবচেয়ে বেশী পার্টনারশীপের রেকর্ড।
বেশ মজার ঘটনা আছে এই ম্যাচ নিয়ে। কোচ রমাকান্ত আচরেকার ( শচীনের গুরু যিনি) সহকারী কোচ চৌহানকে বলে গিয়েছিলেন, এরা দু’জন সেঞ্চুরি করার পরেই যেন ডিক্লেয়ার করে দেয় ইনিংস। রমাকান্ত কোথায় যেন গিয়েছিলেন একটু। তাঁর কথামতো চৌহান দুই বন্ধুকেই সমানে ইনিংস ডিক্লেয়ার করতে ডাকছিলেন। শচীন শুধু কাম্বলিকে বলেছিলেন, ‘ আরে ইগনোর কর, খেলতে থাক ‘। বোলাররা বেধড়ক মার খেয়ে দুই ব্যাটসম্যানকে বলছিলেন তোদের কোচ ডিক্লেয়ার করতে বলছে।
কে শোনে কার কথা! সমানে পেটাচ্ছিলেন দুই জনই। অবস্থা এমন হয়েছিল স্কোরবোর্ডের যিনি দায়িত্বে ছিলেন সে বেচারা স্কোরেই ঘুলিয়ে বসে কয়েকবার। শেষে শচীনের থেকে বাদও যায় কয়েক রান। রানের হিসাবে তালগোল পাকিয়ে গেছিলো। সে বেচারার কি দোষ আর। এমন ঝড়ের গতিতে রান আসছিলো বেচারা তালই রাখতে পারেনি। এখনকার মত ডিজিটাল স্কোরবোর্ডে হিসেব তো আর ছিলো না তখন। প্রতিপক্ষ বোলাররা পড়েছিলো আরো বিপাকে। একজন খেললে আরেকজন তো ধরার কথা। কিন্তু এতো কোমারাম ভীম আর আল্লু সিতারামা যেন! দু’জনেই ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে বসে আছে।
একজনের বয়েস ছিলো ১৫, আরেকজনের ছিলো ১৬। দু’জনের জন্যই ঐ ম্যাচ ছিলো গেম চেঞ্জার। এরপরই শচীন আর কাম্বলি ডাক পান মুম্বাই একাদশ ও ভারত জাতীয় দলে। অবশ্য কাম্বলি বেচারা খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেননি। বিদায় নিতে হয় টীম থেকে চটজলদি। তাঁর নিয়ন্ত্রণহীণ আচরণই এর জন্য দায়ী অবশ্য।
হ্যারিস শীল্ড ট্রফি অবশ্য এরপরেও বহু কালজয়ী ম্যাচ উপহার দিয়েছে, বহু ঘটনা জড়িয়ে গেছে আজাদ ময়দান,শিবাজী ময়দানের সাথে। তবে শচীন আর কাম্বলির সেই মহাকাব্য এখনো অক্ষত। বেচারা বাহুতুলে যেমন মার খেয়ে খেয়ে ইতিহাস হয়ে গিয়েছে, তেমনি এই দুইজনের কেউ একজন আউট হলে মাঠে নামবে সে আশায় পরের জন ঝাড়া বসে ছিলো প্যাড, হেলমেট পরে। লাঞ্চের বিরতিতে চৌহান ফোন করেছিলেন রমাকান্তকে পাশেরই এক পিসিও ( PCO) থেকে। কাম্বলি ৩৪৯ এ আটকে যাওয়ার কারণ ঐ রমাকান্তই। উনি বলেছিলেন কোন ৩৫০ এর দরকার নেই। এখনি ডিক্লেয়ার চাই ইনিংস। বেচারা কাম্বলিও আটকে যান ৩৪৯- এ। শচীন তো কাম্বলিকে এও বলেছিলেন, আরো ৩৬ করলে ৭০০ রানও হবে আর কাম্বলি একটু ধরে খেললে শচীনেরও ৩৫০ হয়ে যাবে। ভাবো তো একবার।
এর কিছুই অবশ্য হয় নি! তবে যা হয়েছিল তা ক্রিকেটের একটা অনন্য অধ্যায় হয়ে আজো রয়ে গিয়েছে।
লেখাটি নিয়ে মতামত