বাড়ন্ত শিশুদের সুস্থতার অন্যতম একটি প্রয়োজনীয় বিষয় হলো নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের। শিশুকে বয়স উপযোগী পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতকরণের বাঙলাদেশের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অনেক অভিভাবক র জানেন না যে শিশুদের মায়ের দুধের পাশাপাশি সম্পূরক খাবার দিতে হয় সময়ানুজায়। আবার কিছু পরিবার আছে যারা সীমিত আয়ের কারণ শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারে না।শিশুকে বয়স উপযোগী পরিপূরক খাবার দেওয়ার হার জাতীয়ভাবে ই বেশ কম।
ইউনিসেফের জরিপে দেখা যায় :
- ১. মাত্র এক তৃতীয়াংশ শিশুকে বয়স অনুসারে প্রয়োজনমতো সম্পূরক খাবার দেওয়া হয়।
- ২.মাত্র ২৩ শতাংশ শিশুকে নবজাতক ও ছোট শিশুদের খাওয়ানোর নিয়ম মেনে খাবার দেওয়া হয়।
- ৩. মায়ের প্রথম দুধ বা শাল দুধ খাওয়ানোর হার মাত্র ৫১ শতাংশ।
- ৪. ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সালে নিয়মিতভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৯০ শতাংশ থেকে কমে ৮৭ শতাংশ হয়েছে।
জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে নবজাতককে অবশ্যই মায়ের দুধে যেটা শাল দুধে নামে পরিচিত সেটি খাওয়াতে হবে।কারণ এই দুধে এমন অনেক উপাদান থাকে যেগুলো নবজাতককে সাধারণ কিছু অসুখ যেমন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া থেকে সুরক্ষা দেয়। পুষ্টিকর উপাদান নিশ্চিত করা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধে খাওয়াতে হবে।
ছয় মাস বয়স পূর্ণ হলে তাকে সেরিলাক্স ও শাকসবজি বা ডিমের মত পারিবারিক খাবার চটকে খাওয়াতে হবে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে পারিবারিক খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধে খাইয়ে যেতে হবে। একেই বলে পরিপূরক খাবার। এর মাধ্যমে শিশু শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়া থেকে পারিবারিক খাবার খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়। শিশুর ক্রমবর্ধমান পুষ্টি চাহিদা পূরণে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বে ছয় মাস থেকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় এবং এমন একটি সময়ে এটা হয় যখন তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে।
গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়, শিশুর মৃত্যু ও অসুস্থতা বেশিরভাগ কারণ হলো পুষ্টিহীনতা।পরিবারে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে পুরো জনগোষ্ঠীর এক চতুর্থাংশ শিশুকে তার প্রয়োজনমতো খাবার দেয়া যায় না। ফলে শিশুর পুষ্টির ঘাটতি থেকে যায়।
শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ৬-৮ মাস বাড়তি খাবার দিতে হবে এর পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত ৩ বার ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার দিতে হবে। খাবারের পরিমাণ ২৫০মিলি বাটির অর্ধেক দিনে ২বার। খাবার তৈরীর সময় (ডাল, ভাত, শাক/সবজির সাথে মাছ/মাংস, ডিম) এ উপাদান থাকবে। প্রতিদিন কলিজা, ব্রেইন এগুলো খাওয়াতে হবে। তবে খাবার তৈরি ও পরিবেশনের সময় হাত ধৌত করতে হবে। ৯-১১ মাসঃ উপরোক্ত খাবারগুলো চলবে ৩বাটি ২৫০মি.লি. অর্ধেক বাটি করে খাওয়াতে হবে ১২-২৩মাসঃ ৩বাটি ২৫০মি.লি.পূর্ণভাবে খাওয়াতে হবে।
তবে শিশুকে জোর করে খুব বেশি পরিমাণ খাবার খাওয়ানো ঠিক না। বাড়ন্ত একটি শিশু কোন একটি খাবার খেতে পছন্দ না করলে তাকে ওই পুষ্টি উপাদান আছে সেই খাবার দিতে হবে। শিশুকে কখনোই শক্ত খাবার দিতে হয় না এতে শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে । একটু একটু করে শিশুর খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। উদ্ধিজ আমিষ জাতীয় খাবার শিশুর জন্য বেশ উপযোগী।ডিম শিশুর স্বাস্থ্য এর জন্য খুব উপকারী।টক জাতীয় খাবার শিশুদের দেওয়া ঠিক নয় । মিষ্টি খাবারগুলো শিশুদের জন্য বেশি উপযোগী ।এছাড়াও শিশুর খাবার এ বেশি লবণ দেওয়া ঠিক নয়। চিনির পরিবর্তে মধু বা গুর ব্যবহার করা ভালো।
একটা বিষয় জানা রাখা উচিত আমাদের, শিশুর স্বাভাবিক খাবারে অভ্যস্ত হওয়া শিশুর দাঁত ওঠার ওপর নির্ভর করে। যে শিশুর দাঁত আগে উঠবে সেই শিশু সাভাবিক খাবারে দ্রুত অভ্যস্ত হবে। শিশু খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এবার জেনে নেয়া যাক শিশুকে দিনে ঠিক কতবার খাওয়ানো উচিত।৬-৮ মাস বয়সী শিশুর প্রতিদিন দুই থেকে তিন বার এবং ৯-১১ মাস বয়সী শিশুদের জন্য তিন থেকে চার বার প্রধান খাবার এবং পাশা পাশী চাহিদা অনুযায়ী এক থেকে দুবার পুষ্টিকর নাস্তা দিতে হবে। এক বছর বয়স থেকে শিশুকে নিজের হাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
যেকোনো একটি খাবার শুরু করার পর একটানা তিন থেকে পাঁচ দিন সেই খাবারটি দেওয়া উচিত, ওই খাবারটিতে শিশুর অ্যালার্জি আছে কি না বা সেটি খেলে শিশুর অন্য কোনো সমস্যা হয় কি না, তা এই সময়ের মধ্যেই ধরা পড়বে। শিশুকে বাজারজাত খাবারের পরিবর্তে ঘরে তৈরী বাড়তি খাবার দিতে হবে। তাতে শিশু সুস্থ থাকবে। সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য শিশুদের মানসম্মত খাবার খাওয়ান।এভাবেই মূলত শিশুর পুষ্টিকর খাবার খেতে নিশ্চিত করতে হবে যার মধ্য দিয়ে শিশুটি দ্রুত বেড়ে উঠবে এবং শারিরীক বিকাশের সাথে মানসিক বিকাশ ঘটবে।
লেখাটি নিয়ে মতামত