বায়েজিদ বোস্তামীর সেই ঘটনাটা আমরা জানি বন্ধুরা? সারারাত মায়ের শিয়রে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অথবা মোগল সেই বাদশার গল্প? যেখানে বাদশাহ’র পুত্র শুধু ওস্তাদজীর পায়ে পানি ঢেলেছিলেন। নিজ হাতে পা পরিষ্কার করে দেননি বলে বাদশাহ কোমল এক রাগ দেখিয়েছিলেন ওস্তাদের ওপর। বাদশাহ’র বক্তব্য ছিলো, ‘ তাঁর ছেলে যদি নিজ হাতে পা পরিষ্কার করে না-ই দিবে, তবে গুরুর প্রতি ভক্তি আর আসলো কই ‘।
বন্ধুরা, দু’টো ঘটনাই কিন্তু ভক্তি নিয়ে। হোক সে গুরুভক্তি বা মাতৃভক্তি। আমাদের ছোটবেলা থেকেই কিন্তু এসব জিনিস চর্চা করা উচিত। জানো, আমাদের বঙ্গবন্ধুরও ছেলেবেলা অসাধারণ কিছু শিক্ষাগুরুর সাহচর্যে কেটেছিলো। উনার শিক্ষাগুরুরা ছিলেন একেকজন জহুরী। রত্ন চিনতে তাঁরা একফোঁটা ভুল করেননি।
দুইজন শিক্ষকের ভুমিকা বঙ্গবন্ধুর জীবনে বেশ ছাপ রেখেছিলো। একজন আব্দুল হামিদ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব গুণ বিকাশে এই লোকটির অবদান অসামান্য। উনি শিক্ষক ছিলেন কম, হিতৈষী ছিলেন বেশী। কোন ছেলের বই কেনার টাকা নাই, কার বাড়িতে আজ রান্না হয় নি ; ঐসব দিকেই উনার সদা খেয়াল। এমনকি মুষ্ঠি চাল ব্যবস্থা পর্যন্ত প্রবর্তন করেছিলেন তিনি। স্বচ্ছল পরিবারের সন্তানদের থেকে মুষ্টি চাল সংগ্রহ করে সেই চালের টাকায় গরীব ছেলেদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতেন হামিদ সাহেব। এসব ঘটনা কিশোর বঙ্গবন্ধুকে বেশ প্রভাবিত করে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দীক্ষা ঠিক ওখান থেকেই। ‘ মুসলিম সেবা সমিতি ‘ নামে একটা সংগঠনও ছিলো এসব কাজের জন্য। বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক ভীতও যেন তৈরী করে দিয়েছিলেন হামিদ সাহেব। শিক্ষার পাশাপাশি দীক্ষাও দিয়েছেন যিনি অকাতরে।
এছাড়াও বেজেন্দ্রনাথ সূত্রধরকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু নিজ অফিসে পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন। বেজেন্দ্রনাথ বঙ্গবন্ধুর প্রাইমারী শিক্ষক ছিলেন। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, শিক্ষিত মায়ের কথা। বঙ্গবন্ধু তাঁর কর্মে ও নেতৃত্বের জীবনীতে দেখিয়েছেন কেন শিক্ষাগুরুই সবচেয়ে মুখ্য।
বন্ধুরা, নেতৃত্ব জিনিসটা সহজাত ভাবেই গড়ে উঠতে পারে। আবার চাইলে কেউ একজন পারেন তার ভীত গড়ে দিতে। ছোট বা কিশোর বঙ্গবন্ধুর মধ্যে দু’টোরই মিশেল পাওয়া যায়। শিক্ষক হামিদুর রহমান হঠাৎ মারা যাওয়ার পর সেই ‘সমিতি’র দায়িত্ব যেমন বঙ্গবন্ধুর ঘাড়ে এসে পড়ে। কিন্তু ঐ যে শিক্ষা গুরুর দেখানো পথ আর নিজের স্বকীয় নেতৃত্বের গুণাবলী ; এই দুইয়ে বঙ্গবন্ধু সেই বৈতরণি পার করে যান।
এসব আমরা কেন বললাম জানো? কারণ, শেকড়ের যে সন্ধান, সেটাই একমাত্র ধ্রুব। সব ভুলেও শেকড়েই আমাদের ফিরতে হয়। জীবন আমাদের অনেক পরীক্ষাই নিবে। নিজের শেকড়কে কোন অবস্থাতেই ভুলা যাবে না। শিক্ষাগুরু নয় কেবল, শিক্ষকদের আমরা দীক্ষাগুরু মানবো, সব অতীত মনে রাখবো না হয়তো, তবে শেকড় ভুলা যাবেনা কিছুতেই, কোনমতেই।
লেখাটি নিয়ে মতামত