শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বুদ্ধির বিকাশ ও সুস্থতার জন্য যেমন পুষ্টির প্রয়োজন, ঠিক তেমনি শিশু মৃত্যুর প্রায় এক তৃতীয়াংশের কারণ মারাত্মক পুষ্টিহীনতা। পুষ্টিহীন শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হাওয়া জরুরি।
তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিঃ
- ১) শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ঘন ঘন রোগে আক্রান্ত হওয়া।
- ২) খাবারে অরুচি।
- ৩) শিশুর অস্বাভাবিক আচরণ।
- ৪) শিশুর ত্বক ও চুলের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন।
- ৫) অমনোযোগ।
- ৬) সব সময় শিশুর মধ্যে ক্লান্ত ভাব লক্ষ করা।
- ৭) রোগ থেকে সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে।
দীর্ঘ মেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকিঃ
- ১) শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।
- ২) বয়স ও উচ্চতা অনুসারে ওজন ও উচ্চতা না বাড়া।
- ৪) শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ না হওয়া।
- ৫) মুখ,পেট ও পায়ে পানি আসা।
- ৬) রক্ত শূন্যতা।
- ৭) পড়াশোনায় অমনযোগী ও পরীক্ষায় ফলাফল অসন্তোষজনক হওয়া।
- ৮) স্বাস্থ্য ভালো না থাকা।
- ৯) শিশুর কর্ম দক্ষতা কমে যাওয়া।
- ১০) চোখে কম দেখা এবং ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে পড়া।
- ১১) মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়া।
পুষ্টি হীনতার কারণঃ
- ১) শিশুর দীর্ঘ দিন সুষম খাদ্যের অভাব।
- ২) মা-বাবার পুষ্টি বিষয়ক জ্ঞানের অভাব।
- ৩) পারিবারের অশিক্ষা ও দারিদ্র্য।
- ৪) শিশুদের ক্রনিক রোগের কারণে খাবারে অরুচি।
- ৫) শিশুর দীর্ঘদিন ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হওয়া।
- ৬) শিশুর লিভারসহ পরিপাকতন্ত্রের রোগ।
- ৭) অস্বাস্থ্যকরভাবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও রান্না করা।
- ৮ ) খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ।
- ৯) শিশুর কৃমি রোগ।
- ১০) খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব, শিশু পুষ্টিহীনতার অন্যতম কারণ।
পুষ্টিহীনতা প্রতিরোধে যা করবেনঃ
- ১) পরিবারের সবাইকে স্বাস্থ্যগত ও পুষ্টিগত জ্ঞান বাড়াতে হবে।
- ২) শিশুর পুষ্টিহীনতার সঠিক কারণ বের করে তার চিকিৎসা করতে হবে।
- ৩) শিশুর জন্মের পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
- ৪) শিশুকে সময় মতো সব টিকা দিলে স্বাস্থ্যের সুরক্ষা বৃদ্ধি পাবে।
- ৬) শিশুর ছয় মাস বয়স থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি পাতলা সবজি খিচুড়ি, ডিমের কুসুম ও সেমি সলিড খাবার শুরু করতে হবে।
- ৭) শিশুকে খাওয়ানোর সময় ভালোবাসা ও যত্ন নিয়ে খাওয়াতে হবে।
- ৮) যেহেতু প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে- তাই এসব খাবার বেশি করে খেতে দিতে হবে।
- ৯) পুষ্টিহীন শিশুদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে এবং নিয়মিত ডাক্তারের সেবা ও পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে।
- ১০) পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করুন এবং দুটি সন্তানের মধ্যে বয়সের আদর্শ দূরত্ব বজায় রেখে সন্তান নিন। নতুন সন্তান এলে আগের সন্তানের খাবার ও সার্বিক যত্নে অবহেলা করবেন না।
শিশু চিকিৎসক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল
লেখাটি নিয়ে মতামত