অস্ট্রেলিয়া ইন্ডিয়া ট্যুরে এসেছিলো। মুম্বাইয়ের একটা ম্যাচে যুবরাজ ঠিকঠাক পারফর্ম করতে পারেন নি। মেজাজ হারিয়ে, ড্রেসিং রুমে এসেই ফ্লোরে ব্যাট দিয়ে মারলেন এক ঘা। ব্যাট ভেঙে কয়েক টুকরা! সাথে মন ভেঙেছিল শচীনের। যাকে আদ্যোপান্ত আইডল মেনে এসেছেন যুবরাজ। শচীন এগিয়ে এসে বলেছিলেন, ক্রিকেট তোমাকে অর্থ, সম্মান সব দিয়েছে, দিচ্ছে, তুমি ক্রিকেট ব্যাটের সাথে এরকমটা করতে পারো না! যুবরাজ আর তেমনটা করেনওনি কখনো।
যুবরাজের প্রিয় প্রতিপক্ষ অবশ্য ক্যাঙ্গারুরাই। ৮০ বলে ৮৪ রানের ইনিংসে এদের সাথেই শুরুটা হয়েছিলো সেই ২০০০ সালে। ২০১১ তে কোয়ার্টারে অস্ট্রেলিয়াকে বাউন্ডারি মেরে হারানোর পর যে বুনো উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন, ফাইনাল জিতেও অতটা উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি।
বাবা যোগরাজ সিং মেজাজের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। যুবরাজে সেই ছোঁয়া বা ছায়া কিছুটা হলেও ছিলো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্রডকে ৬ বলে ৬ মারার পিছনে আসলে মেজাজটাই কাজ করেছিলো। বাবা যোগরাজ মেজাজ না দেখালে অবশ্য স্কেটার হয়েই থেকে যেতে পারতেন যুবরাজ। ১৪ বছর বয়সে স্কেটিংয়ে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশীপও জিতেছিলেন। বাবা যোগরাজের অবশ্য প্রবল আপত্তি, ‘ হলে বাপু ক্রিকেটারই হতে হবে ‘। যোগরাজ নিজেও ছিলেন ক্রিকেটার। নিজের সাধের স্কেটিং তো ছাড়লেনই, মাঝখান থেকে তার বাবা -মায়ের ছাড়াছাড়ি। বেশ কন্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম পোস্টার বয় হয়ে উঠেছিলেন ২০১১ বিশ্বকাপের এই ‘ প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট ‘।
ক্যান্সারকে হারিয়ে মাঠে আসা, স্কেটার থেকে ক্রিকেটে আসা, পেসার থেকে স্পিনার হওয়া – সবমিলিয়ে বেশ বৈচিত্র্যময় ক্রিকেট ক্যারিয়ার। চারশতাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা ১১ সহস্রাধিক আন্তর্জাতিক রানে যুবরাজকে মাপতে যাওয়া বোকামি। যুবরাজ এরচেয়ে বেশী কিছু। ক্রিকেটপ্রেমীরা যুবরাজকে সেই ৬ বলে ৬ ছক্কা, ন্যাটওয়েস্টে ৩২৫ রান তাড়া করতে গিয়ে ফিল্ডিং মেট কাইফের সাথে অনন্য জুটি বা ১২ বলে অর্ধশতকেই যদিও বেশী মনে রেখেছেন অথবা মনে রেখেছেন মুহাম্মদ কাইফের সাথে মিলে দুর্ধর্ষ ফিল্ডিং প্রদর্শনীর কারণে।
শুরুতে শচীনের প্রভাব কতটা ছিলো তার একটা ধারণা পাওয়া গিয়েছে। আর ক্যান্সার পরবর্তী কঠিন সময় পেরিয়ে যুবরাজকে মাঠে ফিরিয়ে আনতে শচীন ছিলেন সবচেয়ে অগ্রণী। আর শচীনের প্রতি যুবরাজের ভালোবাসা কেমন সেটা ২০১১ বিশ্বকাপের পরেই বুঝা গিয়েছিলো। সংবাদ সম্মেলনে অকপট বলেছিলেন, “আমরা শচীনের জন্যই বিশ্বকাপটা জিততে চেয়েছি”। অবশ্য সেবার পুরো টীম ইন্ডিয়ার মুখেই সে কথাটাই ছিলো।
শচীনই তাঁকে বলেছিলেন ‘ক্রিকেট আমরা ভালোবেসেই খেলি! এর বাইরে টাকা-পয়সা যা কিছু আছে সব গৌণ বোনাস। মুল কিন্তু ভালোবাসাটুকুই। ভালোবাসায় ছেদ পড়ার আগেই যতি টানা জরুরী ‘। ২০১৯ সালেই যতি টেনে দিন যুবি। যদিও শচীনের সাথেই সম্প্রতি রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজে যুবরাজ দেখিয়েছেন এখনো চাইলে ছয়ের ফুলঝুরি ছুটাতে পারেন তিনি।
দ্য টেস্ট অব মাই লাইফ নামে বই বেরিয়েছে যুবরাজকে নিয়ে। যে কোনদিন হয়ে যেতে পারে সিনেমাও। এমএস ধোনি ঃ আনটোল্ড স্টোরি যেমন হয়েছে বা কপিল দেবদের নিয়ে এইটি থ্রি যেমন হচ্ছে। এমএস ধোনি মুভিতে অবশ্য যুবরাজকে হালকা পাওয়াও গিয়েছে। তাঁর মহাকাব্যিক ৩৫৮ রানের কথাও আছে মুভিতে। অভিনেতা যোগরাজের ছেলের জীবনী ( তার বাবা পাঞ্জাবি মুভি ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয়ও করেন) রিল লাইফে নিয়ে আসা গেলে মন্দ হয়না বিষয়টা। ২০১১ সালে ফিনিশিং শটে ফিনিশার মাহির ছয়টাতো ট্রেডমার্ক হয়ে গিয়েছে বহু আগেই। নন-স্ট্রাইকে থাকা যুবির উপরেও এবার আলোটুকু পড়ুক। লাইট-ক্যামেরা -অ্যাকশনের।
লেখাটি নিয়ে মতামত