আচ্ছা যদি এমন হয় যে রাস্তায় হুট করে বিপদে পড়ে গিয়েছ? একদল ছিনতাইকারী তোমাকে ঘিরে ধরেছে, কি কি আছে আর কি কি নেই তোমার কাছে তার হিসাব চাইছে হাতে একটা ছুড়ি নিয়ে। তুমিও প্রথমে খুব ভয় পেয়ে আছো। কিন্তু হুট করে….! হুট করে কোনো সুপারম্যান এসে তোমাকে রক্ষা করল? না! ভুল! হুট করে তুমিই শুরু করে দিলে মারামারি, একটার পর একটা ঘুষি, শারীরিক বিভিন্ন কলা-কৌশলের মাধ্যমে মুহূর্তেই তাদেরকে কুপোকাত করে দিলে আর বাঁচিয়ে নিলে নিজেকে! কেমন হয় বলো তো?
এটি কিন্তু কোনো সুপারহিরো কোয়ালিটি অর্থাৎ অলৌকিক শক্তি নয়। এটির জন্য প্রয়োজন একটি ভিন্ন শিক্ষা যার নাম মার্শাল আর্ট। এটি হলো এমন এক কলা-কৌশল ও শৈল্পিক অঙ্গভঙ্গি যার মাধ্যমে অস্ত্র ছাড়াই নিজেস্ব প্রতিরক্ষা সম্ভব।
মুষ্টিযুদ্ধ, উইং চুন, ক্যাপুয়েরা, কিকবক্সিং, তায়কোয়ান্দো, জুডো, কুংফু, মুই থাই, ক্যারাতে, গ্লিমা, স্যামবো সবই মার্শাল আর্টের অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতপক্ষে এসব বিভিন্ন ধরনের মার্শাল আর্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে শারীরিকভাবে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা এবং যেকোনো ধরনের ভয়ভীতির প্রতি রুখে দাঁড়ানো।
মার্শাল আর্টের নাম শুনলেই একই সাথে যাদের নাম চলে আসে তারা হলো জেট লি, ব্রুস লি, জ্যাকি চ্যান, টনি জা ইত্যাদি। তাঁরা হলো বিখ্যাত সব মার্শাল আর্টিস্ট। তাঁদের নাম শুনলেই হয়ত মাথায় আসে বিভিন্ন অ্যাকশন ফিল্মের নাম, যেসব ফিল্মে তারা দেখিয়েছে তাদের মার্শাল আর্টের নিপুণতা।
মার্শাল আর্ট বলতে বোঝায় “Art of Martial” অর্থাৎ যুদ্ধের শিল্প। কিন্তু বর্তমানে এই শিল্পকলা যুদ্ধের জন্য নয় বরং যেকোনো জায়গায় নিজের নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দ্যেশ্যে প্রয়োগ করার জন্য শেখানো হয়। আমাদের দেশে সাধারণত কারাতে এবং তায়কোয়ান্দো-এই দুইটি প্রচলিত মার্শাল আর্ট।
কারাতে: কারাতে হলো মার্শাল আর্টের একটি প্রকারভেদ। এটি এমন একটি আঘাতের কৌশল যেটি ঘুষি, লাথি, হাঁটু এবং কনুইয়ের আঘাত ও মুক্তহস্ত কৌশল যেমন: ছুরিহস্ত ব্যবহার করা। কারাতের মূল লক্ষ্য হলো আঘাত করা। যারা কারাতে অনুশীলন করে তাদেরকে বলা হয় কারাতেকা। চার বছর বয়স থেকে যে কোনো বয়সের মানুষই কারাতে শিখতে পারে। এই শিক্ষা আমাদেরকে করতে পারে আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী। একই সাথে কারাতে শেখার মাধ্যমে জীবনধারাতেও আসে ব্যাপক পরিবর্তন, বৃদ্ধি পায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এটিও অন্যান্য শিল্পগুলোর মতোই একটি শিল্প। খেলাধুলা, ব্যায়াম ও চিত্ত-বিনোদনের একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যমও হতে পারে এই কারাতে।
কারাতেতে র্যাংকিং বোঝাতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রঙের বেল্ট। শিক্ষার্থীর ধাপ পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় তার বেল্টের রঙ। প্রথম পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের “সাদা” রঙের বেল্ট দেওয়া হয়ে থাকে। এরপর ধীরে ধীরে পরবর্তী ধাপগুলো উত্তীর্ণ হলে শিক্ষার্থী হলুদ, কমলা, নীল, সবুজ, পার্পল, ব্রাউন বেল্ট পেয়ে থাকে। কারাতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মানজনক হচ্ছে “কালো” বেল্ট। ব্ল্যাক বেল্ট অর্জন করার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী অন্যদের কারাতে শেখানোর যোগ্য হয়ে ওঠে।
ঢাকায় কারাতে শিখতে পারবে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান হচ্ছে-
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুডো ও কারাতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
- ঢাকা সিতোরিউ কারাতে একাডেমি
- ব্ল্যাকবেল্ট একাডেমি
- ইয়াং ড্রাগন মার্শাল আর্ট সেন্টার, মগবাজার
- এম কে সিতেরিউ কারাতে একাডেমি, যাত্রাবাড়ী
- চায়নিজ কুংফু অ্যান্ড উশু স্কুল, মোহাম্মদপুর
এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল কলেজেও কারাতে শেখানো হয়ে থাকে। আর খরচও খুব একটা বেশি হয় না।
তায়কোয়ান্দো: অনুশীলনকারীর ভিত্তিতে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্শাল আর্ট এবং দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় খেলা। তায়কোয়ান্দোর লক্ষ্য হলো লাথি। এটিও একটি ব্যায়াম, বিনোদন মাধ্যম ও খেলার মাধ্যম হতে পারে। একই সাথে ধ্যান-ধারণারও একটি মাধ্যম হতে পারে। এটি শুধু শারীরিক নয় মানসিক উৎকর্ষ সাধনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঢাকায় তায়কোয়ান্দো শিখতে চাইলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর যেকোনো একটি হতে পারে তোমার পছন্দ –
- বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো ফেডারেশন অনুমোদিতঃ
- জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়
- এশিয়ান তায়কোয়ান্দো ফেডারেশন (ATF)
- ইন্টারন্যাশনাল তায়কোয়ান্দো ফেডারেশন (ITF)
যদিও মার্শাল আর্টের ব্যাপকতা আমাদের দেশে এখনও কাঙ্ক্ষিতভাবে বিস্তৃতি লাভ করে নি। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটা অতীব জরুরী একটি বিষয়। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য এই শিক্ষা অত্যাবশ্যকীয় বলা চলে। ছোট থেকেই প্রতিটি বিদ্যালয়ে এটি একটি বাধ্যতামূলক শিক্ষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, শেখানো উচিত সেলফ ডিফেন্স। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে প্রত্যেকেরই উচিত যেকোনো বিপদ মোকাবিলায় নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। নিজেকে প্রস্তুত করার অন্যতম একটি মাধ্যম হতে পারে মার্শাল আর্ট।
লেখাটি নিয়ে মতামত