অদেখা মহাকাশকে নিয়ে আমাদের প্রশ্নের শেষ নেই। থাকবে নাই বা কেন! অদেখা যেকোনো জিনিস নিয়ে আমাদের আগ্রহ বরাবরই বেশি তাও যদি হয় এত বেশি আকর্ষণীয় এবং মজাদার একটি বিষয়। মহাকাশে আবার যাওয়ার ইচ্ছাও হয় আমাদের অনেকেরই। অনেকে আবার হতে চাই নভোচারী ! আমরা কি জানি নভোচারী মানে কি? নভোচারী বলতে কি বুঝায়?
‘নভোচারী’ শব্দটি হলো ইংরেজি শব্দ ‘Astronaut’ এর বাংলা রূপ। আবার ‘Astronaut’ শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘তারার নাবিক (Star Sailor)’। রাশিয়ায় নভোচারীদেরকে বলা হয় ‘Cosmonaut’। আর স্বাভাবিকভাবেই নভোচারীদেরকে আমরা তারার নাবিক বলতেই পারি। কারণ তারার দেশেই তাদের সমস্ত কাজ, একটা জাহাজে (Spaceship) করে ভেসে গিয়ে ওখানেই তাদের গবেষণা করতে হয়। তারার দেশে গিয়ে তারা সরেজমিনে দেখে আসেন ওই এলাকাটা। নিয়ে আসেন ওখানকার নানারকম খবরাখবর।
সুবিশাল মহাকাশ বা মহাবিশ্বের খুবই ক্ষুদ্র একটি জায়গায় আমাদের বাস। যার কারণে মহাকাশের অধিকাংশ জিনিসই আমাদের অজানা রয়ে গেছে। যার মধ্যে কিছু কিছু আবার আমরা জেনেছি নানারকম গবেষণার মাধ্যমে।তবে যা জানা গেছে তার সবটা সত্যি কিনা তা নিয়েও রয়েছে নানারকম মতবাদ। ঠিক ভুল যেটাই হোক আমাদের তো জানতে হবে। আজকে আমরা জানব মহাকাশের খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে।
প্রথমেই আমরা জানব বহু আলোচিত ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে। যার সামনে কিছু এলে সে নাকি তা খেয়ে ফেলে! সেটা আবার কি জিনিস! চলো তবে জানি।
ব্ল্যাক হোল :
‘ব্ল্যাক হোল’ বা ‘কৃষ্ণগহ্বর’ হচ্ছে মহাকাশের এমন একটি অংশ যার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতই প্রখর যে তার হাত থেকে কোন কিছুই পালাতে পারে না, এমনকি আলোর রশ্মিও।
এর নাম গহ্বর বলা হলেও আসলে এটা ফাঁকা নয়। বরং এর ভেতরে খুব ছোট একটি জায়গায় বিপুল পরিমাণ পদার্থ জমাট বেঁধে আছে। তার ফলেই এর মহাকর্ষ শক্তি এত জোড়ালো।
আরেকটি মজার বিষয় অথবা ভীতিকর বিষয় কি জানো? আমরা যে সুন্দর গ্রহতে বাস করছি, তাও কিন্তু একটা ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে। তবে এর জন্য পৃথিবীকে অবশ্যই বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে। তারই মধ্যে একটি হলো পৃথিবীর নিজেকে কোনোভাবে মিনিমাইজ করে একটা মার্বেলের আকারে পরিণত করতে হবে। আর যদি তা কোনোভাবে সম্ভব হয়ে যায়, তবে আমাদের পৃথিবীও সর্বগ্রাসী ছোট-খাটো একটা ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে।
আচ্ছা মহাশূন্যে কি কোনো গন্ধ আছে?
আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি , এই যে মহাশূন্য, তার ঘ্রাণ কেমন? আমাদের মধ্যে যাদের জানার ইচ্ছা অনেক এবং আমরা যারা কৌতূহলী তাদের মনে কিন্তু ঠিকই এই প্রশ্ন জেগেছে! আর তারা বিভিন্ন মহাকাশচারীদের অভিজ্ঞতা শোনার পর এর উত্তর বের করেছেন। আমরা রাস্তায় বের হলে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করা দোকান দেখিনি এমন বোধহয় খুব কমই হয়েছে।আমরা প্রায় সবাই ওয়েল্ডিংয়ের কাজের সাথে পরিচিত, তাই না? ওয়েল্ডিংয়ের কাজের সময় এর আশেপাশে থাকলে আমরা কিন্তু হালকা ঝাঁঝালো এক ধরনের গন্ধ পেয়ে থাকি, মহাশূন্য বা স্পেসের গন্ধটা ঠিক তেমনই।
জলন্ত বরফ দেখেছ? নাকি এরকম কোনো নামই শোনা হয় নি কখনো! এরকম আবার হয় নাকি! বরফ আবার গরম দুইটা তো সম্পূর্নই বিপরীত। হ্যাঁ এটা ভেবে নেওয়াই তো স্বাভাবিক। তবে মহাকাশের বিষয় একটু ভিন্নধর্মী তো হতেই হয় কি বলো? চলো জানি।
আসলে বরফ বললে প্রথমেই আমাদের মাথায় যেটা আসে তা হল হিমশীতল ঠান্ডা কঠিন কোনো বস্তু। কিন্তু কোনো বরফের তাপমাত্রা যদি ৫২৬º সেলসিয়াস (৯৮০º ফারেনহাইট) হয় তবে তা কেমন শোনাবে? এটাও কি সম্ভব? হ্যাঁ Gliese 436 b গ্রহটিতে এমনটাই চলছে। এজন্যই গ্রহটির এমন নাম।
Gliese 436 b (GJ 436 b নামেও পরিচিত) গ্রহটি প্রথম আবিষ্কার হয় ২০০৪ সালে বিজ্ঞানী পল বাটলার এবং জ্যিওফরে মারসি এর হাত ধরে। তারা গ্রহটি আবিষ্কারের জন্য রেডিয়াল ভেলোসিটি (Radial Velocity) পদ্ধতি অনুসরণ করেন।
পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৩ আলোকবর্ষ দূরে একটা গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যার পুরো পৃষ্ঠটাই নাকি “Burning Ice” এ আবৃত! খটকা লাগছে? আসল ঘটনাটা হচ্ছে, এই গ্রহের পৃষ্ঠে প্রচণ্ড চাপের কারণে পানি কঠিন অবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে, আর গ্রহ পৃষ্ঠে তাপমাত্রা অনেক বেশি বলে এই জমাট বরফ থেকে বাষ্প নির্গত হয়। তাই বিজ্ঞানীরা একে বলছেন “Burning Ice”।
আরেকটি মজার বিষয় কি জানো, সচরাচর পানি ফুটানোর সময় আমরা কী দেখি? বুদবুদ আকারে অনেকগুলো পানির ফোঁটা পাত্রের উপরের দিকে উঠে এসেছে। কিন্তু কেউ যদি মহাকাশে গিয়ে কোনোভাবে পানি ফোটানোর চেষ্টা করে, তাহলে কিন্তু একই ঘটনা ঘটবে না। অনেকগুলোর পরিবর্তে একটা মাত্র দানবাকৃতির বুদবুদ উঠে আসবে।কতটা অদ্ভুত হবে তাহলে বিষয়টি একবার চিন্তা করে দেখো তো।
মহাকাশ সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জেনে নিই!
- মহাকাশ সম্পূর্ণ নিঃশব্দ। তার কারণ মহাকাশে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। কাজেই শব্দ গমনের কোনও মাধ্যমও নেই।
- মহাকাশে একটি নক্ষত্র রয়েছে যার উপরিতলের তাপমাত্রা মাত্র ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারাটির নাম WISE 1828+2650. এটি পৃথিবী থেকে ৪৭ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সূর্যের উপরিতলের তাপমাত্রা ৫৭৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
- শনির বৃহত্তম উপগ্রহ স্যাটার্নে মানুষ তার হাতের দু’পাশে দু’টো ডানার মতো পাতলা চামড়া লাগিয়ে অনায়াসেই উড়ে বেড়াতে পারে। কারণ বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব সেখানে অত্যাধিক আর মাধ্যাকর্ষণ অত্যন্ত কম। অবশ্য এই কাণ্ডটি কেবল তত্ত্বগতভাবেই সম্ভব।
- সৌরমণ্ডলের মোট ভরের ৯৯ শতাংশই দখল করে রেখেছে সূর্য।
- চাঁদের মাটিতে মানুষের পায়ের ছাপ আগামী ১০ কোটি বছর রয়ে যাবে। কারণ চাঁদে বায়ুমণ্ডল বা জল নেই, ফলে সেই চিহ্ন মুছে যাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।
- মহাকাশ থেকে সূর্যকে হলুদ নয়, সাদা দেখায়। আসলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে সূর্যের ফোটন কণা বিচ্ছুরিত হয়ে যায়, ফলে সূর্যের দীর্ঘতর দৈর্ঘ্য সম্পন্ন হলুদ, কমলা আর লাল আলোকরশ্মিগুলিই কেবল আমাদের চোখে ধরা পড়ে। মহাকাশে বায়ুমণ্ডল নেই, কাজেই এই কাণ্ডটি ঘটবারও সুযোগ নেই।
- বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন মহাকাশে একটা বিপুল জলাধার রয়েছে। কতটা বিপুল? পৃথিবীর সমস্ত সাগরে যতটা জল রয়েছে তার ১ কোটি ৪০ লক্ষ কোটি গুন বেশি।
- একবার একদল রাশিয়ান বিজ্ঞানী মহাকাশে আরশোলার প্রজনন ঘটান। তার ফলে যে ৩৩টি আরশোলা জন্ম নেয় তারা নাকি পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া আরশোলাদের থেকে বেশি শক্তিশালী, দ্রুত, এবং সক্ষম ছিল।
- প্রতি বছর চাঁদ পৃথিবী থেকে ১.৫ ইঞ্চি করে দূরে সরে যাচ্ছে।
- মহাকাশ সফরের পরে মহাকাশচারীদের উচ্চতা দু’ইঞ্চি করে বেড়ে যায়।
মজার সব তথ্য জেনে মহাকাশ সম্পর্কে আগ্রহ আরো বেড়ে গেল তো!হ্যা; জানার কোনো শেষ নেই।আমরা মহাকাশ সম্পর্কে নিত্যনতুন আরো নানারকম তথ্য জানব এবং নিজেদের বন্ধুদের জানাব।
লেখাটি নিয়ে মতামত