একটা ইঁদুর হতে চায় শেফ, একটি মেয়ে কিছু ছুঁয়ে দিলেই তা নাকি বরফ হয়ে যায়, ৩ সদস্যের ছোট একটি পরিবারে ৪র্থ সদস্য হিসেবে যুক্ত হয় একটি পুঁচকে ইঁদুর, এই ইঁদুর কিন্তু কাগজ কাটে না বরং মানুষের মতো কথা বলে, সবার সাথে মিলেমিশে থাকে।
কিন্তু এসব কি বাস্তবে সম্ভব? বাস্তবে যা সম্ভব নয় তাও সম্ভব মুভিতে আর শিশু-কিশোরদের জন্য নির্মিত হলে তো কথাই নেই ! কল্পনা, রোমাঞ্চ আর চমকপ্রদ সব কাহিনি নিয়ে হাজির হয়ে যায় মুভিগুলো !
“কিডস মুভিজ” নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই মাথায় আসে “বেবি’স ডে আউট’ এর নাম। একটি ছোট্ট বাচ্চাকে কিডন্যাপ করতে আসা ৩ জন ছদ্মবেশী ফটোগ্রাফার যখন বাচ্চাটিকে কিডন্যাপ করতে ব্যর্থ হয় তখনই শুরু হয় মুভির আসল কাহিনি। রোমাঞ্চকর, উত্তেজনাপূর্ণ এক যাত্রা শুরু হয় তাদের ৪ জনের, যা নিয়েই এই পুরো মুভি।
এরকমই আরেকটি মুভি আছে “হোম এলোন সিরিজ” যেখানে দেখা যায় বাচ্চাটি বিভিন্ন ভাবে মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে পড়ে এবং সেই সময়ে বুদ্ধির সাথে নানান কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে।
এমন আরও অসংখ্য মুভি আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ইংলিশ মুভিঃ দ্যা বস বেবি, কোকো, দ্যা রাটাটুলি, স্টুয়ার্ট লিটল, আইস এইজ সিরিজ, টয় স্টোরি সিরিজ, দ্যা লায়ন কিং, দ্যা লেগো, কারস, ওয়াল্ট ডিজনি প্রযোজিত দ্যা বিউটি এন্ড দ্যা বিস্ট, ট্যাংগেলড, ফ্রোজেন, সিন্ডারেলা, স্নো হোয়াইট, ফাইন্ডিং নিমো, মোয়ানা, থাম্বেলিনা, এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড ইত্যাদি।
এবার আসি এমন একটি বিখ্যাত কিশোর-উপযোগী মুভির কথায় যেটি দেখে নি এমন মানুষ কমই আছে বলা যায়। এটি জনপ্রিয়তা লুফে নিয়েছে একে একে আটটি সিরিজ নির্মাণের মাধ্যমে। মুভিটি হচ্ছে হ্যারি পটার সিরিজ। এই মুভির মূল কাহিনি হ্যারি পটার ও তার দুই বন্ধুর একটি খারাপ যাদুকরের বিরুদ্ধে সংগ্রাম নিয়ে।
এছাড়াও কিশোররা পছন্দ করে এমন আরও অনেক ইংলিশ মুভি রয়েছেঃ দ্যা ক্রোনিক্যালস অব নার্নিয়া সিরিজ, পাইরেটস অব ক্যারাবিয়ান, থর, স্পাইডার ম্যান, এভেঞ্জারস, সুপারম্যান, ব্যাট ম্যান, জাস্টিস লিগ, হাংগার গেইম, মেইজ রানার, ডেসপিক্যাবল মি, দ্যা ইনক্রেডিবলস ইত্যাদি। এছাড়া কিছু ইংলিশ ডাবড জাপানিজ এনিমেটেড মুভিসও রয়েছে যেগুলো না দেখলেই নয়। যেমনঃ দ্যা স্পিরিটেড অ্যাওয়ে, কিমি নো না ওয়া (ইয়োর নেইম), এ সাইলেন্ট ভয়েস, মিরাই, উইদারিং উইদ ইউ, আই ওয়ান্ট টু ইট ইয়োর প্যানক্রিয়াস ইত্যাদি।
এছাড়া কিছু হিন্দি মুভিও রয়েছে যা চাইলে দেখে নিতে পারো। স্টেনলে কা ডাব্বা, বাম বাম বোলে, চিল্লার পার্টি, আবরা কা ডাবরা, টুনপুরকা সুপারহিরো, তারে জামিন পার ইত্যাদি।
অন্যান্য দেশে শিশু-কিশোর উপযোগী ভিন্ন ধর্মী নানান মুভি তৈরি হলেও বাংলাদেশে নেই তেমন কোনো আয়োজন। তবে সংখ্যাটা কমও নয়। আঁখি ও তার বন্ধুরা, আমার বন্ধু রাশেদ, দীপু নাম্বার ২, এমিলি ও তার গোয়েন্দাবাহিনী, ছুটির ঘণ্টা, দূরত্ব ইত্যাদি মুভি দেখে সহযোগিতা, বন্ধুবাৎসল্য, উপস্থিত বুদ্ধি, ঐক্যের মতো গুনাবলির শিক্ষা পাওয়া যায়।
শিশুদের জন্য প্রচলিত বেশিরভাগ মুভিই ইংলিশে কিংবা ইংলিশে ডাব করা। এক্ষেত্রে এসব মুভি তাদের ইংলিশের প্রতি ঝোঁক বাড়াতে সাহায্য করবে। এসব মুভি যেমন বিনোদন দেয় তেমনই এগুলো শিক্ষামূলকও।
এখন প্রশ্ন হলো ছোটদের কেন মুভি দেখতে হবে? কেনই বা তাদের জন্য আলাদা মুভি? কল্পনাশক্তি বৃদ্ধিতে বই পড়ার পর মুভিই হচ্ছে একটি উৎকৃষ্ট উপায়। বইতে আমরা যেমন কাহিনি পড়ে কল্পনা করতে পারি, মুভিতে আমরা তা দেখে কল্পনার সমুদ্রে ডুব দিতে পারি। বারবার কেন আমরা কল্পনাশক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছি? কারণ কল্পনা করে করেই এই পৃথিবীর সকল আবিষ্কার আজকে রূপ পেয়েছে। যদি বিজ্ঞানীরা কল্পনাই না করতেন যে এমন বস্তুও আবিষ্কার করা যেতে পারে যা দিয়ে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে কথা বলা সম্ভব কিংবা মুহূর্তেই স্মৃতিগুলো আবদ্ধ করে রাখা যাবে একটি ছোট বাক্সে অথবা পৃথিবীর এক প্রান্তের খবরাখবর অন্য প্রান্তে বসে একটা স্ক্রিনেই দেখা যাবে তাহলে মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, টিভি ইত্যাদি বস্তু উদ্ভাবন সম্ভব হত না।
বর্তমানে এমন কিছু সাই-ফাই মুভি আছে যা দেখে মনে হয় এগুলোর উদ্ভাবন সম্ভব নয়। যেমন দ্যা টাইম মেশিন। এই ধরণের মুভি কিন্তু আগামীর সম্ভাবনাকেই জানান দেয়। কল্পনা শক্তিকে সম্ভাবনায় পরিণত করতে হবে। কল্পনা শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে দেখতে হবে মুভি, যেগুলো হতে হবে বয়সোপযোগী। আবারও প্রশ্ন হতে পারে বয়সোপযোগী মুভি কেন দেখতে হবে?
একজন তরুণ যদি ছোটদের মুভি দেখে তাতে কোনো ক্ষতি নেই কিন্তু একটি শিশু যদি বড়দের জন্য নির্মিত মুভি দেখা শুরু করে তাহলে তার চিন্তা-ভাবনায় সেরকমই ছাপ পড়বে যা কাম্য নয়, সে বয়সোপযোগী আচরণ করবে না। পূর্বে শিশুদের দৈনন্দিন জীবন ছিল গোছানো, বিনোদনের উপায় সীমিত হলেও তা শৈশবকে রাঙানোর জন্য ছিল যথেষ্ট। কিন্তু বর্তমানে শিশুদের তেমন খেলার সুযোগ নেই, টিভি, ফোন কিংবা যান্ত্রিক খেলনাতেই আটকে থাকছে তাদের জীবন। এই ক্ষেত্রে এসবের সঠিক ব্যবহারই দিতে পারে তাদেরকে একটি গোছানো, শিক্ষণীয় আর বিনোদনমূলক শৈশব। আর মুভি দেখা হতে পারে একটি দারুণ মাধ্যম। তবে মুভি নির্বাচনেও থাকতে হবে সতর্ক।
লেখাটি নিয়ে মতামত