শৈশব ও কৈশোর কালীন সময়ে বেশিরভাগ শিশুরা খেলাধুলা তথা বিনোদন নিতে পছন্দ করে। আর শিশুর সঠিক বিনোদনই পারে শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে। আর এই বিনোদন শিশুর ঘরে বাইরে স্কুলে সবখানেই দিতে হবে। ফারহানা মান্না নামক একজন শিশু বিশেজ্ঞ বলেছিলেন, শিশুর বিনোদন দুটি দিক। এক. মানসিক বিকাশ, দুই. শারীরিক বিকাশ। খেলাধুলা হলো মূলত শিশুর বিনোদন।শিশু যেমন তার নানা বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাবে খেলা বা বিনোদনের মধ্য দিয়ে, তেমনি বাইরে খেলার মধ্য দিয়ে তার সামাজিকতা বৃদ্ধি পাবে, শরীর গঠন হবে৷
বর্তমানে প্রায় দেখা যায় আজকের শিশুরা ভার্চুয়াল জগতের স্যাথে বেশি যুক্ত হয়ে পড়েছে । তারা নানা রকমের ভার্চুয়াল গেম খেলে। শিশুদের এই ভার্চুয়াল প্লে যোনে এ ছেড়ে দিয়ে পিতা মাতা ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাদের কাজে। ফলে শিশুরা ঠিক কি করছে সেই দিকে খেয়াল রাখতে পারেন না । তাছাড়া ওই খেলনা গুলো শিশুদের বয়সের উপযোগী কিনা সেই বিষয়েও তারা সচেতন নয়।
শৈশবে শিশুর ভালো মন্দ বিবেচনা করার বোধ থাকে না । তারা মূলত পরিবারের উপর নির্ভরশীল। কারণ শিশুদের শিক্ষার মূল কেন্দ্র হলো তার নিজ পরিবার। পরিবার থেকে শিশু ভালো মন্দ সম্পর্কে ধারণা পায়, নৈতিক মূল্যবোধ বাড়াতে পারে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কথা চিন্তা করলে দেখা যাবে বেশিরভাগ পরিবারই আজকাল এইসব বিষয়ে মাথা ঘামায় না। তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে বেশিরভাগ সময়।
শিশুদের মন সাধারণত কাদা মাটির ন্যায় যেভাবে আপনি গড়ন দিবেন সেভাবে গড়ে উঠবে আপনার শিশুটি। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুর পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। আমরা বেশিরভাগ সময় শিশুর শারীরিক অবস্থার যত্ন নিয়ে থাকি, তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে ভাবি না। কিন্তু একটি শিশুর শারীরিক সুস্থতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ মানসিক সুস্থতা ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।
আজকাল বেশিরভাগ সময় দেখা যায় জন্ম নেয়ার কিছু দিন পরই হয়তো শিশুটি কান্না থামানোর জন্য মোবাইল ফোন হাতে দিয়ে অভিভাবকরা কিন্তু এতে শিশুর মস্তিষ্কের অবনতি ঘটে।আবার হয়তো অনেক বাবা মা শিশুর সামনে ঝগড়া করে থাকে উচুঁ গলায় কথা বলে। এসব করা একদমই ঠিক না। কারণ শিশু টি চারপাশে যেগুলো হতে দেখে সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। আর পরিবার হলো শিক্ষা গ্রহণের মূল ভিত। পরিবার থেকেই শিশুটি ধীরে ধীরে বেড়ে উঠবে। তাই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। তাই পরিবারের উচিত শিশুদের সময় দেয়া তারা কখনো কি করছে তার খেয়াল রাখা শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক যত্ন নেওয়া শিশুর সাথে উচু গলায় কথা না বলে মৃদু স্বরে তাদের সাথে কথা বলা যাতে শিশুর মেজাজ খিটখিট হয়ে না যায়।
আর সর্বোপরি শিশুকে সময় দিতে হবে ।প্রয়োজনে তাদের সাথে খেলতে হবে । এর ফলে তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানার আগ্রহ বাড়বে। পরিবারের সাথে যে কোনো বিষয়ে খুব সহজে শেয়ার করতে পারবেন যার মাধ্যমে দেশ থেকে সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব হয়।
তাই শিশুদের বিনোদনের জায়গা সমানভাবে নিশ্চিত করতে হবে৷ বিষয়গুলো হতে হবে ইন্টারঅ্যাকটিভ৷কিন্তু বর্তমান শিশুরা কম্পিউটার, মোবাইল, ভিডিও গেম এ বিনোদনের নামে আসক্ত হয়ে পড়ে। সে একা হয়ে যায় এমনকি পরবর্তী সময়গুলোতে সে একা থাকতেই বেশি পছন্দ করে। শিশুরা খেলবে ঝগড়া মারামারি করবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু ঘরের কোণে বসে সারাদিন ভার্চুয়াল গেমে আসক্ত থাকা স্বাভাবিক নয়।আর এই একটি ক্ষতিকর বিনোদন যা আপনার শিশুর মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে একটা পর্যায়ে। শিশুদের জন্য এমন সব বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে যা আপনার শিশুর বাস্তবজীবনে প্রভাব বিস্তার করে। সেটা হতে পারে খেলার মাঠে গিয়ে খেলাধুলা কিংবা নাচ, গান, বিতর্ক ,বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম সমূহে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।
শিশু মনোবিজ্ঞানী এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটের চিকিৎসক ডা. মেখলা সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিশুদের বিনোদনের মধ্যে প্রধান হলো স্কুলে, খেলার মাঠে বা খোলা জায়গায় সহপাঠী এবং বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে খেলাধুলা করা৷ এর মাধ্যমে শিশুরা যেমন বিস্তৃত পরিবেশে নিজেকে প্রকাশ করে এবং খাপ খাইয়ে নেয়, তেমনি খেলাধুলার নানা শৃঙ্খলা ও নিয়ম তাকে শৃঙ্খলা ও পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয় শেখায়৷ কোনো সমস্যা থেকে উত্তরণের পথও সে জানতে পারে খেলাধুলার মাধ্যমে৷”
শিশুদের যদি ঘরে আবদ্ধ রেখে শুধু টিভি, অনলাইন, কম্পিউটার দিয়ে বিনোদনের মধ্যে রাখা হয় তবে তারা তাদের জীবনের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ গুলোকে মোকাবিলা করতে পারবে না। জড় জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। যা শিশুকে বিষাদগ্রস্ত করে তুলবে।
শুধু মাঠপর্যায়ের বা সহশিক্ষা কার্যক্রম ই নয়, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ তাদের জন্য এক ধরনের বিনোদন। শিশুর অভিভাবকদের উচিত শিশুদের এসব কাজে যুক্ত করানো যার ফলে শিশুর সামাজিক ও মানবিক দিক বিকশিত হবে ।
সর্বোপরি একটা কথা বলতে হবে শিশুর অভিভাবক দের আগে সচেতন হতে হবে । শিশুর খেলাধুলা ও বিনোদন জগতে এমন ভাবে সংশ্লিষ্ট করতে হবে যাতে সেখান থেকে আপনার শিশুর শারীরিক, মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি মানবিক বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। কারণ শিশুর প্রতিভা বিকাশের জন্য বিনোদন জগতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই আপনার শিশু বা কিশোরদের বিনোদন জগতের সাথী পরিচয় করিয়ে দিন আগে তাদের ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে।
লেখাটি নিয়ে মতামত