একটি শিশুকে ছোটবেলা থেকেই যেকোনো বিষয়েই প্রতিযোগিতা নামক জিনিস টার পিছনে দৌড় করানো হয়। যার কারণে সবসময় তাদের মধ্যে কাজ করে হেরে যাওয়ার ভয়।বেশিরভাগ সময় তারা থাকে উদ্বিগ্ন ও বিচলিত।এই সবকিছুর মধ্যে মস্তিষ্ক কখনোই বিশ্রাম পায় না।মস্তিষ্কের প্রয়োজন বিশ্রাম।আর এক্ষেত্রে ভ্রমণের বিকল্প কিছু নেই।শিশুদের ভ্রমণে নেয়ার অনেক উপকারিতা বা ইতিবাচক দিক রয়েছে। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বাচ্চা ছোটবেলা থেকেই ভ্রমণে অভ্যস্ত তারা অন্যসব বাচ্চাদের তুলনায় অনেক বেশি স্মার্ট হয়। তারা সহজে মানুষের সাথে মিশতে পারে, তাদের অনেক বন্ধু থাকে। আবার কাজেকর্মে তারা যেমন দক্ষ হয় তেমনি এক মাথা থেকেই আসে বিচিত্র সব বুদ্ধি।
বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর কারণে ভ্রমণপ্রিয় শিশুরা ছোটবেলাতেই অনেক জায়গা দেখতে পায়। বিচিত্র স্থানের বিচিত্র উপাদান তার মাঝে এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।তারা অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারে।একটি জায়গা সম্পর্কে তাদের ভিতর সঠিক ও তথ্যবহুল ধারণা জন্মে।কিন্তু ভ্রমণে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া আর বাবা-মা এর চাকরির কারণে জায়গা পরিবর্তন কিন্তু এক জিনিস নয়। আমরা স্থান পরিবর্তন করি, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেখানে আবাস গড়ে তুলি তাকে একটা অভ্যস্ত অবস্থান হিসেবে নিই। যেমন, আমরা যারা ঢাকায় থাকি তারা অনেকেই ঢাকার বাইরে ঠিকই ঘুরতে গেছি কিন্তু দেখা যায় ঢাকার অভ্যন্তরে যে দর্শণীয় জায়গাগুলো আছে সেগুলো দেখিনি।এটি একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য মানুষের। সে তার বাসভূমিকে অনুসন্ধান করার আগ্রহ পায় কম। কিন্তু ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাওয়া মানেই খুঁজে খুঁজে বিশেষ জায়গাগুলোতে যাওয়া। অনুসন্ধান করা। অভিভাবকের সাথে এই ভ্রমণগুলো তাকে দেয় বিচিত্র অভিজ্ঞতা।
ভ্রমণপ্রিয় এই শিশুরা নানান অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। তারা ছোটবেলা থেকেই পরিচিত হয় পাহাড়ে চড়ার চ্যালেঞ্জের সাথে। তারা পরিচিত হয় সমুদ্রে রোমাঞ্চকর অভিজানের সাথে। নানান অভিজ্ঞতা গড়ে তোলে তাদের চমৎকার মননজগত। এই অভিজ্ঞতা কাজে দেয় বাস্তব জীবনে।তারা নিজেদের বাস্তব জীবনে সেগুলো জীবনে চলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কাজে লাগাতে পারে।অন্য সব শিশুর তুলনায় তাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা বেড়ে যায় বহুগুণে। তারা অনেক সহজে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা অর্জন করে। এমনকি সমস্যায় পড়লে তারা ঘাবড়ে যায় না। কারণ ব্যক্তিজীবনে একটি শিশুকে সাধারণত যেসব সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় সেগুলো ভ্রমণের চ্যালেঞ্জের তুলনায় একেবারে ক্ষুদ্র।
আবার ভ্রমণে সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক কোন সমাধান পাওয়া যায় না। মাথা খাটিয়ে সমাধান বের করে নিতে হয়। এই বিষয়টি শিশুর সৃজণশীলতা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। হ্যাঁ, শিশুকে হয়ত সমাধান বের করতে হয় না। সেটা বড়রাই করে। কিন্ত তার মস্তিষ্কও সমাধান খুঁজতে থাকে। এই অভ্যাস তাকে আরও স্মার্ট করে তোলে।আর ভ্রমণে একটি শিশুর মন বড় করতে সাহায্য করে।
ভ্রমণ ভাবার মাঝেই আনন্দ।ঠিক যেমন অনেক কাজ আছে যা আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়ায়।বর্তমানে বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন ভ্রমণ আমাদের শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং মস্তিষ্ক করে তোলে উন্নত।ভ্রমণ মেটায় মনে ক্ষুধা।
বড় হতে হতে একটি শিশু আশপাশের নানা কিছু থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। ভ্রমণ শিশুদের মনে আগ্রহ জাগায়, নতুনকে জানতে, আবিষ্কার করতে। দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তনও আনে। এখন অনেক মা-বাবা দিনে কর্মস্থলে ব্যস্ত থাকেন, বাড়ি ফিরেও মোবাইল, কম্পিউটার কিংবা টিভি দেখে সময় কাটান। তাই বাচ্চাদের সত্যিকারভাবে সঙ্গ দেওয়ার আদর্শ উপায় হতে পারে ভ্রমণ।
সন্তানকে নিয়ে যেতে পারেন গাছগাছালিতে ভরা কোনো গ্রামে। নিজের গ্রাম হলে তো আরও ভালো। এতে সে গ্রামের সঙ্গে পরিচিত হবে। প্রকৃতি ও গ্রামের মানুষের সংগ্রামী জীবন তার মনে দাগ কাটবে। সে যদি চোখে দেখে, শহরে আমরা যে সবজি বা ভাত খাই, তা উৎপাদন করতে বা চাষ করতে কৃষকেরা কী কষ্ট করে, তখন পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে তার স্বচ্ছ ধারণা জন্মে। এ ছাড়া খাবার প্রতিও আগ্রহ জন্মে, খাবার নিয়ে বায়না কমবে। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে এবং ইতিবাচক ধারণা পেতেও সাহায্য করবে এই ভ্রমণ। বেড়াতে গেলে ভিন্ন মানুষ, ভিন্ন বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি দেখে অতিকেন্দ্রিকতা ও জড়তাও দূর হয়।
অনেকে ভাবেন, শিশুদের নিয়ে বেড়ানো ঝামেলা। বেড়াতে গেলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়বে। রুটিন যাবে ভেঙে। কেউ ভয় পান খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম হবে। আসলে বেড়াতে গেলে মুক্ত হাওয়ায় তাদের শরীর আরও সুস্থ হয়ে ওঠে। ছোটাছুটি আর শারীরিক কসরতে তাদের হাড়ের গঠন শক্ত হয়। রোদের আলোতে পাবে ভিটামিন ডি। আর মনোজগতেও আসে পরিবর্তন। রুটিন ভাঙা কখনো কখনো জরুরি।
এটা করো না, ওখানে যেয়ো না-এসব শৃঙ্খলে শিশুকে বেঁধে রাখবেন না। তাকে অবাধে খেলতে ও ছুটতে দিন। দেশের বা গ্রামের পথঘাট, অপরিচ্ছন্নতা বা নেতিবাচক বিষয় নিয়ে ওর সামনে বিরক্তি বা ক্রোধ প্রকাশ করবেন না। সব জায়গায় সব পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করুন। এই ভ্রমণ পথের শিক্ষা তাকে পরে সহনশীল ও উন্নত জীবন গড়তে সাহায্য করবে।”বিদ্যার্জনে ভ্রমণের স্থান পুঁথিগত বিদ্যারও অনেক উপরে।”
লেখাটি নিয়ে মতামত