বই পড়ার উপকারিতা যেমন আমাদের কারোরই অজানা নেই তেমনই মোবাইল ফোন ব্যবহারের অভ্যস্ততাও আমাদের পেয়ে বসেছে। আর এই করোনাকালীন সময়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার জীবনে যোগ করেছে নতুন এক মাত্রা !
আমরা জানি “পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই” কিন্তু বর্তমানে মোবাইল ফোনের আলোই যেন আমাদেরকে আলোকিত করছে, একটি বইকেও মোবাইলের ভেতরে স্থাপন করা সম্ভবপর হয়েছে। বই পড়ার ঝোঁক থেকে মোবাইল ফোনে গেম খেলার ঝোঁক শিশু থেকে বড় সকলকেই যেন পেয়ে বসেছে বর্তমান যুগে।
প্রথমেই যদি বলি বই কেন পড়ব? তাহলে বলতে হবে, বই পড়াটাকে মস্তিষ্কের ব্যায়াম বলা যেতে পারে। শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে যেমন শারীরিক অঙ্গভঙ্গিময় নানান ব্যায়াম করতে বলা হয় তেমনই মানসিক সচলতা বজায় রাখতেও প্রয়োজন মস্তিষ্কের সঞ্চালনা আর এজন্য বই পড়ার নেই কোনো বিকল্প ! বই মানুষকে কল্পনা করতে শেখায়, পরিচয় করিয়ে দেয় নতুন নতুন জীবনের সাথে, মানুষের ভাবনার পরিধি ঘটায়, ঘটায় জ্ঞানের বিস্তার।
মোবাইল ফোন কেন ব্যবহার করব সে প্রশ্নের অবশ্য সুযোগই নেই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘুম ছাড়া প্রতিটি মুহুর্তেই ফোনের প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করা সম্ভব নয়। উপরন্তু, করোনার এই সময়ে অনলাইনে পাওয়া যায় না এমন কিছুই হয়ত নেই। দৈনন্দিন খাবার সামগ্রী থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সকল কিছু, বিলাসিতার সামগ্রী সবই পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাটাও এখন শুরু হয়েছে অনলাইনে! যেকোনো বইকে পিডিএফ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, ডাউনলোডের মাধ্যমেই। সারাদিনে ক্লাস করা থেকে শুরু করে, প্রয়োজনীয় কাজ, যোগাযোগ মাধ্যম, বিনোদন সবটার উৎসই এখন মোবাইল ফোন। অনলাইন ভিত্তিক জীবনকে হাতের মুঠোয় এনেছে এই মুঠো ফোন তথা মোবাইল ফোন।
মানুষের শেখার কিন্তু কোনো শেষ নেই। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে আজীবন। কিন্তু শৈশব ও কৈশোরকাল হলো এমন এক সময় যখন শেখার ভিত্তিটা শুরু হয়, তৈরি হয় মনোবৃত্তি। এই সময়ে যদি তাদের হাতে বই ধরিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তারা তাদের মনোজগতকে সাজিয়ে তুলতে পারবে নিজেদের মনের মতো করে। কিন্তু মোবাইল ফোনের ব্যবহার তাদের কল্পনা শক্তি, সৃজনশীলতা ও চিন্তা করার পরিধি কমিয়ে দিতে পারে, যদি সেটির ব্যবহার হয় মাত্রাধিক। কিন্তু একই সাথে এই প্রযুক্তির বিশ্বে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাদ দেওয়ারও সুযোগ নেই। এখন ছোট থেকে বড় সকল শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইনে ক্লাস করতে হয়, পরীক্ষাও দিতে হয় যার জন্য মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ এক কথায় প্রযুক্তির প্রয়োজন পড়ে। শেখার অনেকটা অংশ এখন এই প্রযুক্তি তথা মোবাইল ফোনকে কেন্দ্র করেই।
বই নাকি মোবাইল এই নিয়ে অনেক তর্ক, বিতর্ক সম্ভব যা নিয়ে বড় বড় রচনাও লিখে ফেলা যাবে। আমি বলব এই নিয়ে তর্ক বা বিতর্ক উভয়ই নিষ্প্রয়োজন। বরং বই এবং মোবাইল ফোন উভয়েরই সমান ও সুষ্ঠু প্রয়োগ যদি শিশুদের জীবনে করা সম্ভব হয় তাহলে একটি শিশু যেমন শিখবে, কল্পনা করবে, আনন্দ পাবে অপরদিকে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিখবে এবং যুগোপযোগী আচরণের সাথেও পরিচিত হবে। পরিশেষে বলতে চাই “একটি শিশু মোবাইলে কতটুকু পড়বে অথবা বইয়ে কতটকু মোবাইল ফোন নিয়ে জানবে” তার মাপকাঠি নির্বাচন করতে হবে মাতা-পিতাকেই।
লেখাটি নিয়ে মতামত