“প্রজাপতি প্রজাপতি , কোথায় পেলে ভাই এমনো রঙিন পাখা “, নজরুলের এই শিশুতোষ গানটি যেন শুধু শিশুমন নয় বড়দের ও মন জুরিয়ে দেয়!! প্রকৃতির সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য ই যেন ফুল। আর ফুলে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার প্রজাপতি। সজ্জিত বাগান কিংবা অধুনা বেলকনিতে ছোট টব কিংবা বাড়ির আঙিনা যেখানে ই এই অলংকার থাকুক মন কাঁড়তে বাধ্য।
শিশুরা বরাবর ই কল্পনা প্রিয়। তাদের তাই প্রকৃতির সংস্পর্শে রাখা উচিত। মানবজীবনের প্রথম পাঠ এই প্রকৃতি থেকেই হয়। একজন শিশুর মানসিক বিকাশ তার জন্মের পাঁচ বছরের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ হয়ে যায়। এই সময় ই মস্তিষ্কের কোষ গুলোর সংযোগ ঘটে । প্রকৃতি শিশুকে কল্পনা করতে শেখায়। শিশুর জগৎ টা বড় করে এই প্রকৃতি। একজন শিশু যখন আস্তে আস্তে বুঝতে শিখে সে স্বাভাবিক ভাবেই কৌতুহল বোধ করে। তখন সে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। প্রকৃতির রূপ রস তার এ কৌতুহল বোধ আরো বাড়িয়ে দেয়।
নগরিক জীবনে যন্ত্রের দাপট আর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার চাপে শিশুর যেনো বাসায় এবং বিদ্যালয়ের চার দেয়ালের গন্ডিতে বাঁধা পড়ে গেছে। বাইরের মুক্ত বাতাসে ছুটে বেড়াবে সেই ফুরসত ই যেনো নেই। এই সীমাবদ্ধতা শিশুর জন্য ইতিবাচক নয় বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চাহিদা পরিবর্তন হয়, সাথে জীবন ধারণের ধরণের ও পরিবর্তন আসে। প্রত্যেক পিতা – মাতা ই চান তাদের সন্তান ভবিষ্যৎ এর টিকে থাকার সংগ্রামে যেন জয়ী হয়। সে যেনো সবার আগে থাকে। এই টিকে থাকার লড়াই শুরএ হয় শিশুর শৈশশব থেকেই। মনোবিজ্ঞানীদের মতে শিশুর ৭০ থেকে ৮০ ভাগ শতাংশ মানসিক বিকাশ তার পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত হয়ে যায়। এসময় তাই তাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচর্যা প্রয়োজন সঠিক ভাবে। শিশুর আবেগের বহিঃপ্রকাশ এবং অন্যান্য ভাবভঙ্গি উপলব্ধি মাধ্যমে যাতে তার সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, তাই তার সাথে খেলাধুলা করা, কথা বলা, বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি মাধ্যমে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো উচিত। অধিকাংশ অভিভাবক তার শিশুর আবেগীয় দিক বিবেচনা না করে হারজিত মাধ্যমে তার বুদ্ধিমত্তা নির্ণয় করে। এর ফলাফল শেষে শিশুর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। শুধু তাই নয়, এর দরুন অনেক শিশুই নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। তার আত্মবিশ্বাস কমে যায়। অনেক সময় দেখা যায় মা – বাবা সন্তান কে বলেন ভালো ফল না করলে আমার মরামুখ দেখবি কিংবা অন্য বাচ্চার সাথে তুলনা করে বলে ওর পা ধোয়া পানি খা এ জাতীয় কথা। এ ধরণের কথা শিশুর মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা শিশুর মানসিক বিকাশে খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের তাই প্রাণখুলে হাসতে এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া উচিত। মনোবিজ্ঞানী ক্যাসপার এডিমেন বলেন হাসির মাধ্যমে শিশুর সামাজিকতা শিখে। শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং মানসিক বিকাশে হাসি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর প্রথম পাঠ প্রকৃতি থেকে হওয়া উচিত। শিশুকে প্রকৃতি কৌতুহলী করে তোলে। প্রকৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহনে মানসিক চাপ কমে। প্রকৃতির সংস্পর্শে মন হয়ে উঠে উদার। শিশুদের শেখার আগ্রহ বেড়ে যায় অনেকাংশে। শিশু প্রকৃতির সংস্পর্শে বিভিন্ন ফুল, গাছপালা, নদী, আকাশ সহ স্রষ্টার অপরূপ সৌন্দর্য সম্পর্কে অবগত হয়। তখন তার মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। শিশু নতুন নতুন শিখতে শুরু করে। সে জিজ্ঞেস করে আকাশ কেনো নীল কিংবা গাছ কেনো সবুজ? অধিকাংশ শিশুই এখন সাধারণ গাছপালা, পশুপাখি কিংবা পোকামাকড় চেনেনা। প্রকৃতির সাথে ব্যবধান অনেক।
প্রকৃতির সাথে শিশুদের অনেক ব্যবধান হয়ে গেছে বলে দাবী করছে পরিবেশবাদী সংগঠন গুলো। তারা পরামর্শ দেন বাইরে গিয়ে শিশুদের প্রকৃতিতে মুক্ত সময় কাটাতে। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ও যদি শিশুরা স্ক্রিন থেকে দূরে বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করে তাদের বিকাশের ধারা বহাল থাকবে বলা হয়। যান্ত্রিক জীবন থেকে দূরে গ্রামীন পরিবেশে তাদের নিয়ে মাঝে মাঝে বেরানো যেতে পারে। গ্রামীন পরিবেশে শিশু নতুন অনেক বিষয় ই শিখতে পারে যা সে শহুরে যান্ত্রিক জীবনে পাবেনা। তাই প্রকৃতির সংস্পর্শে শিশুকে আনা খুব জরুরি।
লেখাটি নিয়ে মতামত