শিশুই ভবিষ্যৎ। যাদের হাতে থাকবে আমাদের আজকের পৃথিবী এক নতুন বেশভূষায়। আমাদের শিশুদের বর্তমান অবস্থাই হলো তাদের আগামীর ভিত্তি। শিশুদের বিকাশ সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি সবাই? আদৌ কি আমরা জানি বিকাশ কি? বিকাশ হলো শিশুর আচার ও ক্রিয়ার পরিবর্তন। বিকাশ জীবনকালব্যাপী চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু বিকাশের শুরুটি হতে হবে ইতিবাচক।বিকাশ শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আবেগীয় ও ভাষাগত দিক নিয়ে আবর্তিত হয়।
শিশুর বিকাশের এক বিরাট অংশ শিশুর শারীরিক অবস্থা। সুস্থ সবল ভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রয়োজন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া। আমাদের অনেক শিশুরাই বর্তমানে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের দেহগঠন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এসব কিছুর মূল কারণ পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহনে অনিহা।
শিশুরা প্রায়ই শাক, সবজি, দুধ ডিম খেতে চায় না যার ফলে তাদের দেহে পুষ্টির বিশাল ঘাটতি দেখা যায়। শিশুকে একই খাদ্য প্রতিদিন দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খাদ্যের মধ্যে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে খাবারের প্রতি শিশুর রুচি ও আগ্রহ বাড়বে।
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহনের সাথে সাথে করতে হবে শরীরচর্চা। শরীরচর্চার মাধ্যমে শিশুদের শরীরের রক্তচলাচল বৃদ্ধি পাওয়ার মাধ্যমে শিশুর দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দৈহিক বৃদ্ধি সুষম হতে শরীরচর্চা বিকাশ অপরিসীম।
শিশুর বিকাশে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের গুরুত্ব অনেক। শিশুর প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে শিশু নির্ভয়ে যেকোনো সমস্যা তার বাবা-মা অথবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করতে পারে। এর মাধ্যমে শিশুর ওপর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কিনা তা অতি সহজে বোঝা যায়। অনেক শিশুরা অনেক সময় নানা ধরনের নেতিবাচক সমস্যার সম্মুখীন হয়েও কাউকে কিছু বলতে পারে না। এভাবে মানসিক স্বাস্থ্য অবক্ষয় হতে থাকে। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে শিশু ছোট থেকে ভালো খারাপের পার্থক্য করতে শিখতে পারবে। পাশাপাশি শিশু মানসিক দিক থেকে হবে প্রফুল্ল। শিশুর মানসিক বিকাশের ওপর নির্ভর করে শিশুর ভবিষ্যৎ।
পিতামাতা ও শিক্ষকরা অনেক সময় শিশুকে কিছু শেখাতে গেলে ভয় বা আঘাত দিয়ে থাকে। যা শিশুর মানসিক বিকাশে সরাসরি প্রভাব ফেলে। কোন কিছু শেখানোর আগে যদি ভয় বা আঘাত করা হয় তখন শিশু কোনদিন সেই বিষয় শিখতে পারবে না। পিতামাতার কাছে আঘাতপ্রাপ্ত হলে শিশুর মনে তার পিতামাতার প্রতি খারাপ মনোভাবের সৃষ্টি হয়।পিতামাতার প্রতি ভালোবাসা কমতে থাকে।পিতামাতা পরবর্তীতে যত ভালোকথাই বলুক না কেন শিশু তা গ্রাহ্য করে না।শিশুকে আঘাত ও ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকতে হবে এবং শিশুর প্রতি সদয় হতে হবে।
পরিবারে অনেক সময় আমরা নানা ধরনের আলোচনায় বসে থাকি। আলোচনায় উপস্থিত থাকে পরিবারের সবাই। এ আলোচনায় শিশুর উপস্থিত শিশুর জন্য খুবই আনন্দপূর্ণ একটি বিষয়। এ আলোচনায় থাকার মাধ্যমে শিশু তাকে পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে মনে করে থাকে। যার ফলে শিশুর মনোভাব প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয় এবং শিশুর মধ্যে নেতৃত্ব প্রদানের গুনাগুন সৃষ্টি হতে থাকে। আলোচনার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে দলগত কাজের দক্ষতা তৈরি হবে। প্রত্যেকের মতামত শোনার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য পরিবেশ অতি গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশের ওপরই নির্ভর করে শিশুর মানসিক অবস্হা। সুস্থ, সুন্দর পরিবেশ শিশুকে করে আনন্দমূখর ও ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারী।
পরিবেশ যদি নেতিবাচক হয় তাহলে শিশুর ওপর পরবে নেতিবাচক প্রভাব। তাই পরিবেশ খুব সচেতনতার সাথে নির্ধারণ করতে হবে। মানুষের আচার-আচরণের মাধ্যমেই আমরা ঠিক করি মানুষ টা আসলে কোন ধরনের। মানুষের আচার-আচারণের ওপর ভিওি করেই মানুষ সম্মান পেয়ে থাকে। যারা নম্র-ভদ্র আচারণের অধিকারী তারা সবার কাছেই প্রিয় হয়। তারা সবার শ্রদ্ধার পাত্র হয়। অপর দিকে যারা নেতিবাচক আচারণের অধিকারী হয় তাদের কেউ পছন্দ করে না। তাদের কেউ সম্মান করে না। তাই পিতামাতার অত্যাবশ্যক করনীয় শিশুকে সুন্দর আচার শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি শিশুর সামনে নিজের আচারণ সঠিক রাখা।
শিশুদের প্রশংসনীয় কাজে উৎসাহ দেয়ার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে ভালো কাজ করার আগ্রহ জন্মাবে।মানুষ মাত্রই প্রশংসনীয় বাক্য শুনতে সর্বত্র আগ্রহী।শিশুর ক্ষেত্রেও তাই। শিশুকে ভালো কাজে উৎসাহ করার ক্ষেত্রে তার ভালো কাজে প্রশংসা করতে হবে। নিজেদের পড়ালেখার বই গুছিয়ে রাখলে সময় মত পড়তে বসলে বাবা-মায়ের কথা শুনলে প্রশংসা করার মাধ্যমে এসব কাজে শিশুকে আগ্রহী করা যায়।
ধৈর্য্যধারণ একটি মহৎ গুন। জীবনে চলার পথে প্রতিটি ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করতে হয়। শিশুকাল থেকেই ধৈর্যধারণ শেখা খুবই প্রয়োজন। অনেক সময় শিশুরা অনেক রকম আবদার করে বসে। অপ্রয়োজনীয় আবদার দ্রুত সম্পূর্ণ না করে শিশুকে স্নেহের মাধ্যমে ধৈর্য ধারন শেখাতে হবে। এর ফলে শিশু বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে শিখবে।
বড়দের বা গুরুজনের কথা শোনায় শিশুকে মনোযোগী করে তুলতে হবে। কারণ গুরুজনেরা সর্বদা ভালো পরামর্শ দিয়ে থাকে। জীবনে এগিয়ে যেতে হলে গুরুজনদের দেখানো পথ অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। বড়দের কথায় সম্মান করতে
শেখাতে হবে। শিশুর প্রতি সম্মান প্রর্দশনের মাধ্যমেই এসব শিক্ষা শিশুকে শেখাতে হবে। কারণ সম্মান পেয়েই শিশু আগ্রহী হবে সম্মান দিতে।
অনেক সময় শিশুরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে আবদার করে বসে। তাদের আবদার নিয়মিত পূরন করতে থাকলে এক সময় তারা জেদি হয়ে ওঠে। এর ফলে তারা ধীরে ধীরে বিপদগামী হতে থাকে। এজন্য সন্তানের বাধা নিষেধের সীমানা নিধারণ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে শিশুর নেতিবাচক বিষয়ে আবদার সৃষ্টি হবে না।
সমস্যার সম্মুখীন কেউ কখনো হয় নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। জীবনে চলার পথে হতে হয় হাজার সমস্যার সম্মুখীন। সমস্যা সমাধানের সাহস ও মনোবল আয়ত্ত করা অত্যাবশক। শিশুকাল থেকে শিশুদের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তা সমাধান করার উৎসাহ দিতে হবে। এতে করে তারা সমস্যায় পড়লে ভয় না পেয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।
শিশুকে ভালোবাসা,স্নেহ প্রদানের মাধ্যমে শিশুদের ভালোবাসা শেখানো যায়। এভাবে শিশুরা পিতা-মাতা ভাই-বোন আত্মীয় স্বজন, সহপাঠী দের ভালোবাসতে শেখে। শিশুর মধ্যে অনুভুতির সৃষ্টি হয়। মানুষের জীবন সুখ দুঃখ মিলিয়ে। দুঃখ ছাড়া কখনোই সুখ মেলে না।
শিশুর বুদ্ধিমত্তা বিকাশের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা। শিশুকে বিনোদনের পাশাপাশি নানা ধরনের গনিতের খেলা বা যেকোনো সাধারণ জ্ঞানের শিক্ষা দিতে হবে।এর ফলে এসব জিনিসের প্রতি আগ্রহের পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে শিশুর বুদ্ধিমত্তা।
শিশুকে সময় দেয়া প্রত্যেক পিতামাতার কর্তব্য। কারণ শিশু অনুকরণ প্রিয়।পিতামাতাকেই অনুকরণ করে জীবনের প্রথম পথ চলাটা শেখে।শিশুর মধ্যে কোনো বিষয়ে সমস্যা আছে কিনা তাও বুঝা সহজ হয় এভাবে।শিশুদের অবহেলা না করে,তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়াটাই অধিক শ্রেয়।কেননা, তারাই আমাদের আগামী।
লেখাটি নিয়ে মতামত