স্বভাবতই মানবজাতি খেলা প্রেমিক;মাঠ বা বাড়ির উঠান দু’টোই যেন চৌম্বকের মত তাদের টানে এবং এ মায়াটান সেই খেলাপ্রেমিকদের রক্তের সাথে মিশে এক চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তোলে।
বাচ্চারা খেলবে, পড়বে,স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত হবে এটাই যেন সব বাবা-মায়ের ইচ্ছে-আকাঙ্ক্ষা থাকে। কিন্তু শিশু-কিশোররা ক্যারিয়ার হিসেবে যখন খেলাকে বেছে নিতে চায় তখনই অনেক বাবা-মা বাধা দেয়। তাদের ধারণা-হয় খেলা না হয় পড়ালেখা তবে দুইটা একসাথে হয় না। কেননা খেলাধুলা করা ব্যক্তিরা উচ্চশিক্ষায় মনোযোগী হতে পারে না বলে একটি ধারণা তাদের মনে গেঁথে আছে। কিন্তু এ ধারণাটা অনেকেই তাদের যোগ্যতার মাধ্যমে ভুল প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।
এই ধরুন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সেই ছোট করে হাস্যোজ্জ্বল খেলোয়াড়টি স্ট্যাম্পের পিছনে থেকে সবাইকে মাতিয়ে রাখে তাঁর বকবকের মাধ্যমে; জি হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন আমি মুশফিকুর রহিমের কথাই বলতে চাচ্ছি। তিনি কিন্তু স্কুল-কলেজ জীবন অতিবাহিত করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও প্রথম শ্রেণি নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কথায় বলে,”ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।” কথাটা অনেকাংশে সঠিক না হলেও প্রায় সময় কিন্তু এই প্রবাদটি খাপেখাপ মিলে যায়। যেমনটা মুশফিকুর রহিমের জন্য হয়েছে।
জামাল ভূঁইয়ার বাবা-মা চেয়েছিলেন ছেলে হবে চিকিৎসক অথবা আইনজীবী কিন্তু দেখুন তাঁর প্রবল মনষ্কামনা পূরণ হলো একজন ফুটবলার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে। নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম হিসেবে গায়ে জড়ালেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের জার্সি! নিজের আত্মবিশ্বাস থেকেই নিজের জীবনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া! শুধু গতানুগতিক শিক্ষাই যেন ছাত্রজীবনের কাল না হয়ে দাড়ায় সেই থেকেই তিনি ইন্টারনেট ঘেঁটে পড়াশোনা করছেন আইটিতে।
শুধু কি তাই? নাহ, সেইসাথে তিনি একজন শিক্ষক।ডেনমার্কের একটি হাইস্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের ইতিহাস ও ইংরেজি বিষয়ে পড়ান বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার জামাল ভূঁইয়া।সিলেটের কন্যা রাণী হামিদ বাংলাদেশের প্রথম মহিলা আন্তর্জাতিক দাবা মাস্টার। তিনি সেকালেই ইডেন কলেজ থেকে প্রাইভেট ডিগ্রি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছিল এবং খেলার দুনিয়ায় দারুণভাবে অবদান রেখে গেছেন।
উদাহরণ তো বহুত দেওয়া যায় তবে প্রথমে আমাদের নিজেদের মনকে স্থির করতে হবে। এটা বিশ্বাস করতে হবে যে তাঁরা যদি খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনাতেও সফল হতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না বা আমাদের পরিবারের সন্তানরা কেন পারবে না।আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে হবে, তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। দেখুন একটা মানুষ যদি হোঁচট না খায় তাহলে জীবনে কিন্তু হোঁচট খাওয়ার স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে না।
বর্তমান থেকে প্রাচীনকালের মানুষের বুদ্ধিমত্তা এবং স্মৃতিশক্তি যেমন তুখোড় ছিল তেমনই তারা বিভিন্ন ধরনের কাজে পারদর্শীও ছিল। হয়তো পড়াশোনা করেছে কম তবে একদমই যে করে নি তেমনও কিন্তু নয়। ভোরবেলা উঠে যথাসময়ে বই নিয়ে বসেছে এবং বিকেলবেলা মাঠে নেমে খেলেছেও।
বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষগুলোর চেয়ে শহুরে মানুষগুলো কেমন যেন দিনে দিনে যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনা, চাকরির পিছনে ছুটতে ছুটতে তারা প্রায় ভুলতেই বসেছে যে বিনোদনের এক বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে খেলাধুলা। এখানে সেখানে খালি জায়গা পেলেই গড়ে উঠছে দালানকোঠা। তাহলে খেলার জায়গা কোথায়? অনেকের মনেই এই প্রশ্ন জাগতে পারে, তবে আমি বলব এখানে নিজের ইচ্ছেটা বেশি প্রয়োজন। কেননা যেই শহরে খেলাধুলা অনুশীলন করার জন্য বেশ কিছু বড় বড় ট্রেনিং সেন্টার বা বেশকিছু মাঠও রয়েছে, সেই শহরে খেলার জায়গা কোথায় বলাটা একদমই বেমানান।
একজন মানুষকে সবাই ভালোবাসে তার কর্ম এবং পড়াশোনার মাধ্যমে আর সেটা যদি হয় নিজ দেশের জন্য কাজ তাহলে তো কোনো কথাই নেই! নিজের দেশকে সবার সামনে উপস্থাপন করাটা অনেক পরিশ্রমের হলেও বহুগুণে শান্তির এবং প্রাপ্তির। দিনশেষে এটা একজন মানুষের সফলতা। অনেকেই বলে দুইটা কর্ম কখনোই একই সাথে হয় না তবে আমার দেওয়া উদাহরণ এবং আপনাদের রিসার্চ করা জ্ঞান কি বলে? আসলে মানুষ চাইলে সবই সম্ভব। মানুষ চাইলে পড়ালেখার পাশাপাশি মাঠে নেমে সবাইকে খেলা দেখাতে পারে আবার চাইলে পাঠ্যবইকে পুঁজি করে পপকর্ন,কফি পান করতে করতে মাঠে বা টিভির সামনে বসে খেলা দেখতে পারে।
জীবন মানে নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করার ক্ষেত্র। এই যুদ্ধ ময়দানেও হার-জিত থাকে তবে টিকে থাকতে হয় নিজের সাথে লড়াই করেই অর্থাৎ আত্মবিশ্বাসী হতে হয়।আত্মবিশ্বাসটা খুব বেশি প্রয়োজন একটি মানুষের জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। কেননা নিজের প্রতি আস্থা না থাকলে যেকোনো কাজেই সফলতা অর্জন করা অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে কারণ তখন নিজের কাজে নিজেই বাধা হয়ে দাঁড়াবেন যেটা খুবই ভয়ংকর। দুনিয়ায় যে যাই করুক নিজের লক্ষ্য ঠিক করে, নিজের কাজের পরিকল্পনা ঠিক করে অর্থাৎ চার দেয়ালের একটি ঘরে থেকেও আপনি বিশ্ব জয় করে ফেলতে পারেন আবার প্রতিটা দেশ ভ্রমণের মাধ্যমেও জয় করতে পারেন তবে লক্ষ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া বা কাজ করাটাই একজন বিজয়ীর মূল উদ্দেশ্য।
আমাদের ছোটবেলায় বা বড়বেলায় অর্থাৎ স্কুল-কলেজ জীবনে এমন অনেক বন্ধুবান্ধব থাকে যাদের কেউ কেউ বেশির ভাগ সময়ই থাকে মাঠে আবার কয়েকজন এমনও বন্ধু আছে যারা কিনা বইকেই বেশি ভালোবাসে। আসলে শুধুমাত্র যে পাঠ্যবইকে আপন করে নিতে হবে অথবা বাড়ির উঠোনকে আপন করে নিতে হবে বিষয়টা এমন নয়। বরং পড়াশোনা ও খেলাধুলা দুটোই প্রয়োজন এবং দুটোকেই পুঁজি করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
লেখাটি নিয়ে মতামত