তোমরা নিশ্চয়ই ক্রিকেট খুব পছন্দ করো? ধরেই নিলাম পছন্দ করো। সাকিব আল হাসানের মত দাপুটে অলরাউন্ডার তো আমাদের দেশেরই সন্তান। মাশরাফির মত এক অনন্য দেশপ্রেমিক ক্রিকেটার তো বাংলা মায়েরই দামাল সন্তান। সেদেশের সন্তান হয়ে আমরা ক্রিকেট কেমনে পছন্দ না করি৷
এদেশের ক্রিকেট অবশ্য জাতে উঠেছে খুব বেশীদিন কিন্তু নয়। টেস্ট ক্রিকেটকে যদি আমরা সবচেয়ে এলিট ক্রিকেট হিসেবে গণ্য করে থাকি ; তাহলে আমাদের অভিজাত ক্রিকেটের বয়স সবে একুশে পা দিল মাত্র। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আমরা বহু আগে থেকেই খেলছি।
রাকিবুল হাসান, জুয়েল এদের কথা নিয়ে লিখতে গেলে মহাকাব্য রচনা করা যাবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের অবদান নিয়ে লিখতে গেলে আমরা হুইসেলের একটা আলাদা সংখ্যা বের করতে পারবো। সে হবে অন্য কোন একদিন। আমাদের শিশু-কিশোরদের জন্য আমরা তাও তুলে ধরবো। যদিও তোমরা অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যে এসব জানো। আমরা একটু ভিন্ন ভাবে সেগুলো জানাবো।
আচ্ছা, তোমরা নিশ্চয়ই শচীন টেন্ডুলকারকেও চিনো? না চিনে অবশ্য উপায়ও নেই। আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন তো তিনিই।
জানো, এই বান্দা কত বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করেন? ১৬ বছর বয়সে! আরো একটু নিশ্চিত করে বললে ১৬ বছর ২৮৯ দিনে! মানে ঠিক তোমরা যারা এই লেখাটা পড়ছো তাঁদের অনেকের সমান বয়সেই শচীন মাঠে নেমে পড়েছিলেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে।
শুরুটা অবশ্য আরো বহু আগে। তোমরা যেটাকে স্কুল ক্রিকেট বলো সেই স্কুল ক্রিকেটেই তাঁর আরেক বন্ধু বিনোদ কাম্বলীকে নিয়ে শচীন গড়েছিলেন ৬৬৪ রানের এক অনন্য জুটি। সেই যে শুরু আর পিছু ফিরতে হয়নি।
গুরুর গুরুত্ব একজন ক্রিকেটারের জীবনে যে কত বেশী, তা শচীনের জীবনী দেখলেই বুঝা যায়। তোমরা তো মাহেন্দ্র সিং ধোনীর সেই সিনেমাটাও দেখেছো! ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকা মাহিকে ক্রিকেটে নিয়ে এসেছিলেন তার স্কুলের স্পোর্টস শিক্ষকই। এখন চাইলে তোমরা বলতে পারো, মাহি’র উপর এটা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সূক্ষ্মভাবে দেখলে এটা আসলে জহুরীর রতন চেনারই নামান্তর। ঐ শিক্ষক বুঝতে পেরেছিলেন মাহি আসলে ক্রিকেটেই ভালো করবে।
শচীনের ক্ষেত্রে সেটা বুঝেছিলেন দু’জন। তাঁর বড় ভাই অজিত টেন্ডুলকার এবং তাঁর কোচ রমাকান্ত আচরেকার। রমাকান্ত আচরেকার তো শচীনকে নিয়ে ভেসপাতে করে মুম্বাই শহর ঘুরে বেড়াতেন। যাতে শচীন এক জায়গায় ম্যাচ খেলে অন্য আরেকটা জায়গায় ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। কেন করতেন এটা জানো? যাতে শচীন বেশী ম্যাচ খেলতে পারেন এবং নিজের কনফিডেন্স গ্রো করতে পারেন। গুরু-শিষ্যের ব্যাপারটাই ছিলো এমন। শচীন তাঁর আত্মজীবনীতেও উল্লেখ করেছেন তাঁর এই গুরুর কথা।
একটা বিষয় কি জানো, আমাদের শিক্ষার জগতটা বদলাচ্ছে দ্রুতই। তবে একটা জায়গা কিন্তু ধ্রুবই থেকে যাচ্ছে এবং যাবে। আর তা হলো আমাদের জীবনে মেন্টরের ভুমিকা। শচীন হোক বা এডিসন, চাই সে ক্রিকেট হোক বা জীবনের অন্য কোন ক্ষেত্র ; গুরুর শুরুটাই আসলে ধ্রুব, সবচেয়ে বড় সত্য।
লেখাটি নিয়ে মতামত