প্রতিটি স্কুল-কলেজেই থাকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী কিছু সংগঠন। অনেক শিক্ষার্থী বা অভিভাবক মনে করেন ক্লাব বা সংগঠনে কাজ করা মানে সময় নষ্ট, পড়ালেখার ক্ষতি। যার কারণে তারা চায় নিজেদের সন্তানদের এসব সংগঠন থেকে দূরে রাখতে এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে সংগঠনের কাজ করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিতও করতে। অনেক শিশুরা আবার পারিপার্শ্বিক চাপে জানেই না ক্লাবিং কি জিনিস! অথচ একটি বাচ্চাকে যদি ছোটবেলা থেকে সংগঠন করতে দেওয়া হয় তাহলে তার ভিতরে পড়ালেখার পাশাপাশি বেশ কিছু বিশেষ গুনের বিস্তার ঘটবে যা তার ভবিষ্যৎ জীবনে ক্যারিয়ার কিংবা বাস্তবিক ক্ষেত্রে পাথেয় হিসাবে কাজ করবে।
স্কুল জীবনে আমরা বেশ কিছু ক্লাবের নাম শুনে থাকি বা ক্লাবে সংযুক্ত বন্ধুদের কার্যক্রম আমাদের চোখে পড়ে। এসব সংগঠনের কাজ যেমন আনন্দের তেমনই এগুলো থেকে আমরা বাস্তবিক জীবনে অনেক কাজে পারদর্শী হতে থাকি। এসব সংগঠন আমাদেরকে পরবর্তী জীবনের জন্য তৈরি করে। প্রতিটি ক্লাব বা সংগঠনের মৌলিক বিষয় একই। যেমন সবার মতকে শ্রদ্ধা করা, সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ইত্যাদি।
স্কুল গুলোতে সাধারণত ডিবেট ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, কালচারাল ক্লাব, রক্তদান সংগঠন, স্পোর্টস ক্লাব, সায়েন্স ক্লাব ইত্যাদি ক্লাবের সাথে পরিচিত হই।
ডিবেট ক্লাব বা বিতর্ক সংগঠন কি?
বিতর্কের ক্লাব এমন একটি সংগঠন যা বিতার্কিকদের বিতর্ক করার সুযোগ করে এবং একইসাথে প্রয়োজনীয় সকল সুবিধাদির ব্যবস্থা করে দেয়। একজন বিতার্কিক কিংবা আগ্রহী ছাত্র নিজ উদ্যোগে নিজের মতো করে বিতর্ক করতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতা বলে যে, নিজের মতো করে এককভাবে বিতর্ক করা কিংবা বিতর্ক চর্চা চালিয়ে যাওয়া কঠিন। কঠিন এ কারণেই যে ছাত্র-ছাত্রীরা এককভাবে যেমন চর্চা ভালো করতে পারে না, একইসাথে কোনো প্রতিযোগিতায় সুযোগ পায় না ।
বিতর্ককে যদি ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পড়াশোনার একটি প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গ হিসেবে স্কুলের মধ্যেই পেয়ে যায়, তবে তাতে তারা অনেক বেশি আগ্রহী হয় এবং সহজে, দ্রুততার সাথে বিতর্ককে আত্মস্থ করতে পারে ও এই জগতে সফলতা অানতে পারে।
কালচারাল ক্লাব বা সাংস্কৃতিক সংগঠন
আমরা অনেকেই নাচ গান কিংবা আবৃত্তি করতে খুবই আগ্রহী তবে সেগুলোকে চর্চা করা কিংবা কাজে লাগানোর মতো কোনো মাধ্যম পাই না। অথচ আমাদের নিজেদের বিদ্যালয়েরই সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে যেতে পারি আমরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল সোসাইটির মডারেটর সাবরিনা সুলতানা চৌধুরীর মতে, ‘সুস্থ সংগঠনগুলোতে চর্চার মাধ্যমে ইতিবাচক গুনাবলি তৈরি হয়। দায়িত্বশীলতা বাড়ে। নেতৃত্বগুন তৈরি হয়।” ধরুন, একটা সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী হয়ত নাচ-গান-আবৃত্তি কিছুই জানে না, দেখবেন তবু সে একজন “সংগঠন না করা” মানুষের চেয়ে আলাদা।’
ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব
এ ক্লাবে মূলত বাংলা ছাড়াও অন্যান্য ভাষার চর্চা করা হয়। সাধারণত বেশির ভাগ স্কুলগুলোতে ইংলিশ ক্লাবের নামই বেশি শোনা যায়।ইংরেজি সাহিত্য, ব্যাকরণ ও পপ সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে জ্ঞান অর্জন এবং প্রদর্শনের জন্যই ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব। নিজের ভাষার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা জানাটা অবশ্যই নিজেকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। সুতরাং নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব বেশ ভারী ভূমিকা রাখে বলতে হয়।
বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেন ওসামা বিন নূর। কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের হাত থেকে ‘কুইন্স ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া এই তরুণ বলেন, ‘নেতৃত্বের পুরো ব্যাপারটা আমি সংগঠন থেকে পেয়েছি।’ ওসামা মাদ্রাসায় পড়েছেন। তবে নেতৃত্বের জায়গায় নিজেকে তৈরি করেছেন জাগো, বিওয়াইএলসিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে। তার মতে, ‘মতামত জানানো, প্রোগ্রামের বাজেট তৈরি, স্পনসর জোগাড় করা—এসব করতে করতে অবচেতনে একটা প্রশিক্ষণ হয়ে যায়, যেটা পেশাজীবনে কাজে আসে।’
‘সংগঠনে জড়িত থাকার ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস-দূত হিসেবেও কাজ করার সুযোগ মেলে।’ এমন যুক্তি তুলে ধরে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক তানসিফ আনজার বলেন, ‘পড়াশোনা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম একে অপরের সহায়ক।’
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও রোবটিকস ক্লাবের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যারা কম্পিউটার বা রোবট ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত, তারা নতুন কিছু সৃষ্টির আনন্দ উপভোগের সুযোগ পায়।’
আমাদের সবার স্কুলে নিশ্চয়ই বিভিন্ন সহায়ক শিক্ষা কার্যক্রম আছে। না থাকলে নিজেরাই দল বেঁধে তৈরি করে ফেলো সায়েন্স ক্লাব, ডিবেট ক্লাব, নাটকদল, সাইক্লিং ক্লাব, ক্রিকেটদল ইত্যাদি। শিক্ষকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাকি কাজ গুছিয়ে নিতে পারো নিজেরাই।
লেখাটি নিয়ে মতামত