১৮ মার্চ। এদেশে করোনায় প্রথম রোগী মারা যায় এদিনই। কি ভাবছেন? ক্রিকেট লিখতে এসে করোনার গপ্পো ফাঁদি কেন?
১৮ মার্চ বাংলাদেশ নিদাহাস ট্রফির ফাইনালেও হেরেছিলো। তবে সেটা ২০১৮ তে। ভারতের কাছে নয় ঠিক, দীনেশ কার্তিকের কাছে।
গুগুল করুন, ক্রিকেটের সেরা পাঁচ ফিনিশার কে? অজস্র নাম পাবেন! কিছু নাম পাবেন একদম কমন। ধোনি, ডি ভিলিয়ার্স, বেন স্টোকস, কিলার মিলার ; আপনার ধারণার সাথে মিলেও যাবে একদম। তবে একটা সিঙ্গেল ম্যাচ দিয়ে যদি বিচার করা হয়, দীনেশ কার্তিক সেই লিস্টে অনায়াসেই চলে আসবেন।
শেষ দুই ওভারে দরকার ছিলো ৩৪ রান। শেষ ওভারে বারো। এমন প্রেশার মোমেন্টে দীনেশ রানের খাতাই খুললেন ওভার বাউন্ডারীতে ; ১৯ তম ওভারে রুবেল হোসেনের প্রথম বলেই। এরপর ৪, ৬, ডট বল, ডাবল, শেষে আবার ৪ রান মিলিয়ে এক ওভারেই ২২। এক ওভারেই বলতে গেলে ড্রাইভিং সীট থেকে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ।
শেষ ওভারে দরকার ছিলো বারো রান। কি ঘটেনি সেই শেষ ওভারটাতে! ওয়াইড বল, ডট বল, দুটো সিঙ্গেল, একটা বাউন্ডারী, ডট বল সহ শংকরের উইকেট এবং ৬ দিয়ে রানের খাতা খোলা কার্তিকের সেই ৬ দিয়েই শেষ করা। ক্রিকেটের সেরা থ্রিলিং শেষ ওভার বলা যায় তর্কসাপেক্ষে। হয়তো বা আরেকটু বাড়িয়ে ‘থ্রিলিং শেষ দুই ওভার ‘।
ভারতীয়রা ছিলেন মাঠে, তবে আগের ম্যাচের জের ধরেই কিনা, সিংহলিরা ভারতকে টুপি খোলা সাপোর্ট দিয়ে গেলেন একপ্রকার ,প্রেমাদাসা সেদিন ওয়াংখেড়ে বা ইডেনের চেয়ে কম ছিলো না কিছুতেই। দীনেশের অমন ফিনিশে হর্ষধ্বনি কিছু কম শোনা যায়নি।
ফাইনালে জেতাটা আরো প্রলম্বিত হয় বাংলাদেশের। এশিয়া কাপ, নিদাহাস ; স্বপ্নভঙ্গের যাত্রাগুলো আরো দীর্ঘই হলো। সাকিব-মুশফিকরা চোখের জলে আবার বিসর্জন দেন ট্রফির স্বপ্ন।
ফিনিশিং আসলে যার তার কম্ম নয়। নভোজাত সিং সিধুর মত ‘ আনহোনিকো হোনি কারতা হ্যায় ইয়ে ধোনি ‘ – এমন অসম্ভবকে সম্ভব করার মত অনন্ত জলিল ক্রিকেটে খুব কমই দেখা যায়। ৮ বলে ২৯, এই সংখ্যা ঐ ইনিংসের মাহাত্ম্য কিছুতেই বুঝাতে পারে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নাতি-নাতনীদের কাছে গল্প করার মত অনন্য রসদ জোগাড় করে ফেলেছিলেন দীনেশ সেদিন। যেমনটা ২০১৪ ফুটবল ফাইনালে করে ফেলেছিলেন মারিও গোটজে।
এর আগে ভারতের এমন ফিনিশিং রবিন উথাপ্পাও দেখিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। যুবরাজের ড্রেসিংরূম থেকে ছুটে আসা এখনো চোখে ভাসার কথা ক্রিকেটপ্রেমীদের। উথাপ্পা আর দীনেশ দুজনেই কিন্তু কেকআরের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য! একজন ছিলেন, আরেকজন এখনো টানছেন। দুজনেই অভাগা। ভারতীয় টীম খুব একটা মূল্যায়ন করতে পারেনি দুজনকেই। সে অন্যদিনের আলোচনা।
এই ম্যাচ জেতার পরে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিলো। ভারতের আরেক ক্রিকেটার মুরালি বিজয় ম্যাচ জেতার পরে টীম ইন্ডিয়াকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন। কিন্তু দীনেশ নাম উল্লেখ করেননি। নেটিজেনরা বিজয়কে নিয়ে ট্রল করা শুরু করে। পাঠক হয়তো ভাবছেন, ট্রলের কারণ কি। আসলে দীনেশের এক্স ওয়াইফ মুরালি বিজয়ের বর্তমান ওয়াইফ। এই ঘটনা ভারতীয় টীমকেও বেশ বিব্রত করে। আর তাই টুইটে কার্তিকের নাম মেনশন না করাটা অবধারিত ছিলো। আর তাতেই বিজয়কে ধুয়ে দেয় নেটিজেনরা। বলাবাহুল্য, একসাথে টীমে থাকলেও বিজয় আর কার্তিকের মধ্যে চোখ দেখাদেখিও বন্ধ ছিলো। কারণ, বিজয় বন্ধু হওয়ার পরেও কার্তিকের ঘর ভাঙার মুল নিয়ামক ছিলেন।
অদ্ভুত ভাবে এই লেখাটা যখন লিখছিলাম, তখন দীনেশ তাঁর দল কেকেআরকে প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিলেন প্যাট কামিন্সকে সাথে করে,চেন্নাইয়ের বিরূদ্ধে আইপিএলে। যদিও এবার শিখে ছিড়েনি, তবে কার্তিক বোধহয় দেখালেন প্রয়োজনে তাঁর ব্যাট আসলেই চওড়া হয়। টীমে বোধহয় ফেরার পথও বন্ধ। বিসিসিআই চুক্তিও নবায়ন করেনি তাঁর সাথে। সামনের ম্যাচগুলো হয়তো তাঁর জন্য ক্রুশাল। স্পেশালিষ্ট কিপার হিসেবে খেলার সুযোগ তাঁর নেই। স্যামসন, রাহুল, ইষান কিষান, রিসভ, ঋদ্ধিমান ; ভারতের কিপারদের নিয়েই যে রীতিমতো একটা দলের ব্যাটিং লাইনআপ সাজিয়ে ফেলা যাবে!
লেখাটি নিয়ে মতামত