অনুভূতি জিনিসটা মন থেকে আসে, শতবার বা হাজার বার বলেও কিছু অনুভব করানো যায় না। নিজের মধ্যে বিভিন্ন কাজ করার আগ্রহ বাসা বাঁধতে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে। তবে অনুভূতি ছাড়া অথবা অনুভব করা ছাড়া ভালো কোনো কাজে মানুষ আগ্রহ পায় না।
পরিবার আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করার প্রথম স্থান। একটা মানুষ জন্মের পর থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সকল ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে এবং অন্যান্য সকলের সাথে সেইভাবে আচরণ করে থাকে। তাই পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা অর্জন করার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
যৌথ পরিবারের মূলমন্ত্র হচ্ছে একত্রতা। সবাই মিলেমিশে থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যৌথ পরিবার টিকে থাকে। একে অন্যের বিপদে অর্থাৎ ভালোমন্দে পাশে থাকা, সকল কাজে সহযোগিতা করা, সবাই মিলে সকল কাজ ভাগ করে করাই যেন একত্রে থাকার প্রধান উপাদান। যখন পরিবারের বড়রা একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করে থাকে তখন সেই পরিবারের ছোটদের মধ্যেও কিন্তু সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকে এবং তারা রাখতে চেষ্টা করে।
শুধু কি টাকা পয়সা দিয়েই সহযোগিতা করা যায়? অনেকে কিন্তু তাই মনে করেন। চিন্তা করেন টাকায় সুখ আসে। টাকা নাই তো শান্তি নাই। আসলে টাকা সুখ আনতে পারলেও শান্তি দিতে পারে না।
আমরা কমবেশি সকলেই বাহিরে যাতায়াত করি। রাস্তা দিয়ে এক বৃদ্ধ লোক একটি ভারী ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কিন্তু মাঝ পথে এসে তিনি আর হাঁটতে পারলেন না, তখন আপনি সেই দৃশ্যটি দেখে পাশ কেটে হেঁটে বাসায় চলে যাবেন নাকি তাকে সহযোগিতা করবেন?
যদি এই দৃশ্য দেখে আপনার মনের কোণে একটু নাড়া দিয়ে অনুভূতি জাগ্রত হয় তাহলে অবশ্যই আপনি লোকটিকে সাহায্য করবেন আর তা না হলে বিপরীতটি করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। আবার দেখুন এখানে কিন্তু আপনি টাকা দিয়ে কোনো সহযোগিতা করতে পারবেন না বরং আপনি বৃদ্ধ লোকটিকে তার বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসেন এতেই কিন্তু লোকটি শান্তি পাবে এবং বড়দের আশীর্বাদ ছোটদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ আর লোকটি আপনাকে আশীর্বাদ করে দিবেন-এটি কেবলমাত্র একটি উদাহরণ।
ছোট ছোট কাজ থেকেই ভালো কাজের ঝুলিটা একদিন ভারী হয়ে যাবে ধীরে ধীরে।
আমাদের আশেপাশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা না খেয়ে, বিনা চিকিৎসায় মরে যাচ্ছে, বাসস্থানের খোঁজে এদিক-ওদিক ঘোরা ফেরা করছে, আমরা চাইলে তাদের জন্য কিছু না কিছু করতেই পারি, বাড়িয়ে দিতে পারি সহযোগিতার হাত। হোক না ছোট থেকেই শুরু।
স্কুল, কোচিং, খেলার মাঠ, সুপ্ত প্রতিভা চর্চার সময়টুকু বাদে আমরা বেশ খানিকটা সময় বাসায় পরিবারের সদস্যদের সাথে কাটিয়ে থাকি। তখন বাসার বিভিন্ন কাজে মাকে, বোনকে সাহায্য করতে পারি, বাবা অথবা বাহিরের যে কেউ কাজ শেষ করে যখন বাড়ি ফিরে আসে, তখন পানির গ্লাসটা তার সামনে নিয়ে যেতে পারি। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা করতে না জানলে আমরা অন্যদের বিপদে পাশে দাঁড়াতে অস্বস্তিবোধ করব, তাদের আনন্দে পাশে থাকতে ইতস্ততবোধ করব।।
দলগত কাজের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সহযোগিতামূলক কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারি। কারণ কথায় বলে “দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ।” সকলের একত্র হয়ে কাজ করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আমরা স্কুলে বা পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দলগত কাজগুলো করতে পারি।
বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান এবং আমরা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর সকলেই নিজ নিজ ধর্মের উৎসব পালন করি আর অনুষ্ঠান উপলক্ষে নতুন নতুন জামা-কাপড় কিনি তবে আমরা কিন্তু পারি এক বা দুই সেট কাপড় কম কিনে যারা বিনা নতুন জামা-কাপড় দিয়েই অনুষ্ঠান পালন করে তাদের কাঁধে হাত রেখে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।
ছোটরা এসকল উদ্যোগ নিতে পারে এবং তাদের চিন্তা ভাবনা, আবদারগুলো বড়দের কাছে পেশ করলে বড়রা অবশ্যই তাদের উদ্যোগে সহযোগিতা করবে। কেননা উদ্যোগ ভালো হলে সবাই পাশে থাকতে চায়। তবে শুরুটা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারতে হবে। আমাদের মনকে স্থির করতে হবে সেই কাজটির জন্য। আমার সহযোগিতায় একজনের মুখে হাসি ফুটবে এটার চেয়ে আনন্দের কিছু হতেই পারে না। বিশ্বাস করুন যখন আপনি সেই মানুষটির চেহারায় হাসির স্রোত বয়ে যেতে দেখবেন তখন মনে হবে আপনার চেয়ে সুখী বা শান্তিতে দুনিয়াতে কেউ নেই। অন্তত নিজের জন্যে হলেও আমরা সহযোগিতামূলক কাজের মনোভাব নিজেদের মনে গড়ে তুলব।
কাঁধে হাত রেখে, হাতে হাত রেখে সবাই মিলে এগিয়ে গেলেই তো আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে, এগিয়ে যাব আমরা!
লেখাটি নিয়ে মতামত