এমন যদি হতো আমি রূপকথার রাজকন্যা হতাম কিংবা ঘোড়ায় চড়ে বিশ্বভ্রমণ করা রাজকুমার হতাম! হতাম আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখি অথবা পানির নিচে ভেসে বেড়ানো মাছ! কখনো বা হতে ইচ্ছে করে এক গাছ থেকে আরেক গাছে ছুটে বেড়ানো বানর! বড্ড কাল্পনিক হয়ে গেল!
তবে এবার আসা যাক একটু খানি বাস্তবতায়। ইচ্ছাগুলোকে এবার বাস্তবে ডানা মেলি। আচ্ছা কেমন হতো যদি আমাদের দেশটাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় মনোযোগ দিত জাপানের মতো? কিংবা শিক্ষায় এগিয়ে থাকত ফিনল্যান্ডের মতো? দুর্নীতি এতটাই কম হতো যাতে ডেনমার্ককে পিছে ফেলে দেওয়া যেত? নিউজিল্যান্ডের মতো নম্র, ভদ্র দেশ হিসেবে শীর্ষে থাকত আমাদের দেশটাও !
এসব আপাতদৃষ্টিতে অনেকের কাছেই মেকি মনে হতে পারে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কিন্তু রূপকথার মতো এই ইচ্ছে গুলো কাল্পনিক নয়! এই ইচ্ছেগুলোকে চাইলেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য সুষ্ঠু কিছু পদক্ষেপ।
প্রথমেই আসি শিক্ষা-ব্যবস্থায়। শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড। অর্থাৎ শিক্ষার মান দ্বারাই একটি জাতি পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সক্ষমতা লাভ করে। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষা-ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। শিশুদের কাঁধে বইয়ের বোঝা কতটুকু চাপানো হলো ও রেজাল্ট শীটে টপ মার্কস-এই দুটি দেখেই আজকাল শিক্ষার মান যাচাই করা হয়। কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ব প্রদত্ত সাজেশন পড়ে শিশুরা টপ মার্কস ভরে নিজেদের শিক্ষার ঝুলিতে, কিন্তু আসলেই কি তা সুশিক্ষা? শিশুদেরকে পাঠ্যক্রম বহিভূর্ত কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহ দেওয়া, খেলাধুলায় মন দেওয়া ইত্যাদি এ দেশের অভিভাবকদের আওতায় শুধুই সময় নষ্ট। কারণ তাদের মতে শিক্ষার্থীদের ছুটতে হবে শুধু নাম্বারের পেছনে।
কিন্তু যদি অন্যান্য কিছু দেশের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যায় তাহলে দেখতে হবে যে আমাদের দেশ সে তুলনায় বহু পিছিয়ে! ফিনল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুরা প্রথাগত শিক্ষা শুরু করে সাত বছর বয়সে। কিন্তু তা কিন্তু কাঁধে মোটা স্কুল ব্যাগ বয়ে নেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় না। বরং খেলাধুলার মাধ্যমে তারা শিখতে শিখতে বড় হয় যেটাকে বলা হয় “গেমিং এডুকেশন”। খেলতে কার না ভালো লাগে, আর খেলতে খেলতে যদি হয় পড়াশোনা তাহলে তো বুঝতেই হবে যে এটাই ফিনল্যান্ডের সুন্দর শিক্ষা ব্যবস্থার রহস্য। জাপান, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ইত্যাদি দেশগুলোতেও শিক্ষার মান শীর্ষে।
“এমন যদি হতো শিখতে যেতাম স্কুলে, আর খেলতাম বাড়ি ফিরে!” কিন্তু হোমওয়ার্কের ভীড়ে তাও কি সম্ভব? তেমনটাও একদিন সম্ভব হবে বলেই আশা করছি আমরা।
এবার আসা যাক দুর্নীতির কথায়। দরিদ্রতা এবং সঠিক নীতি শিক্ষার অভাবে দুর্নীতির দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ যা জাতির জন্য অভিশাপস্বরূপ। ডেনমার্ক সবচেয়ে কম দুর্নীতিমুক্ত দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ঘুষ দেওয়া-নেওয়া থেকে বিরত থাকায় এই দেশটি ব্যবসা এবং জনগণের জন্য খুবই নিরাপদ বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশে খুন, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, নারী-নির্যাতন, শিশু পাচারের মতো ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
রাত হলেই জনগণের মাঝে নেমে আসে এক নিশ্চুপ অনিরাপত্তা। কিন্তু অন্যান্য উন্নত দেশে দেখা যায় যে রাত হোক কিংবা দিন তারা নির্ভয়ে চলাফেরা করে।এদেশের মানুষ একটি নিরাপদ জীবনের স্বপ্ন দেখে প্রতিটা দিন!
“এমন যদি হতো মন চাইলেই নিরাপদ ভাবে বাহিরে যাওয়া যেত!”
স্বাস্থ্যসেবায় উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি হলো মালয়েশিয়া। অপরদিকে আমাদের দেশে কোনো রোগ ধরা পড়লেই বাহিরের দেশে যাওয়ার একটা প্রবণতা কাজ করে। হবেই বা না কেন কটু হলেও সত্যি আমাদের দেশে কিছু কিছু ডাক্তার নীতিহীন এবং কম দক্ষ।
“এমন যদি হতো, সব রোগেরই নিজ দেশেতেই চিকিৎসা পাওয়া যেত!”
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বললে প্রথমেই জাপানের কথা মাথায় আসে। জাপানে যারাই প্রথম বারের মতো ঘুরতে যায় তারাই অবাক হয় কিভাবে দেশটি এতটা পরিচ্ছন্ন। ঠিক এর বিপরীত চিত্রটি দেখা যায় আমাদের দেশে। জাপানে সচরাচর ডাস্টবিন কিংবা পরিচ্ছন্নতা কর্মী দেখা যায় না কিন্তু তবুও কমতি নেই পরিচ্ছন্নতার। অপরদিকে আমাদের দেশে পরিচ্ছন্নতা-কর্মীরা সকাল হলেই রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার করতে লেগে যায়, কিন্তু তবুও দিন শেষে দেখা যায় ময়লার শেষ নেই। যেসব জায়গায় ডাস্টবিন আছে সেসব জায়গায় দেখা যায় ডাস্টবিনের পরিবর্তে ডাস্টবিনের বাহিরেই বেশি ময়লা। এই সবই সুশিক্ষা ও সচেতনতার অভাব।
“এমন যদি হতো ঘরের মতো দেশটাও পরিচ্ছন্ন হতো!”
এমন দিন এসেছে যে নির্মল বাতাসে শ্বাস নেওয়াটাও একটা স্বপ্নতে পরিণত হয়েছে। দেশের রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছে দূষণের আখড়ায়। কিন্তু যদি ফিনল্যান্ডের কথা ভাবি তাহলে এই দেশটি দূষণমুক্ত দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে পৃথিবীর মানচিত্রে! এমন একটা পরিবেশ পৃথিবীর প্রত্যেকেরই কাম্য।
“এমন যদি হতো দূষণমুক্ত পরিবেশে শ্বাস নেওয়া যেত!”
“এমন যদি হতো” থেকে “এমনই আমাদের দেশ”– যখন এই পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে তখন সকল ইচ্ছেগুলো সত্যিই ডানা মেলে উড়বে। তখন না হয় আবার রূপকথার ইচ্ছেগুলোতে মন দেওয়া যাবে!
লেখাটি নিয়ে মতামত