আনন্দময়ী স্কুলগুলোকে ঠিক ছোটবেলার “আমার প্রিয় বিদ্যালয়” রচনার মত করেই চিন্তা করা হয়। যেখানে স্কুলের চারপাশ থাকতো গাছগাছালিতে ভরা, একপাশে বয়ে যেত একটি নদী। স্কুলের সামনে থাকত সুবিশাল মাঠ। বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়মিত হতো খেলাধুলা। এছাড়া পড়াশোনা তো আছেই। তবে পড়াশোনা যদি হয় আনন্দের মাঝে তাহলে পড়াশোনা করতে কে না চায় !
তবে শহরের স্কুলগুলোতে এসব কিছু সম্ভব না হলেও স্কুলের সামনে একটি খেলার মাঠ রাখা খুব বেশি প্রয়োজন। তাহলে বাচ্চাদের স্কুলের প্রতি থাকবে অন্যরকম টান। স্কুলে থাকবে বড় অডিটোরিয়াম, ফুলের বাগান যেখানে কেবল যেতেই ইচ্ছে হবে। স্কুল হবে অন্যতম প্রিয় জায়গা।
কিন্তু শহরের স্কুলগুলোতে দেখা মেলে অন্য দৃশ্য। ঘুমের রেশ কাটতে না কাটতেই স্কুল শুরু হয় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের। ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে স্কুলে যায় তারা। কাঁধে রাজ্যের বই ভর্তি ভারী ব্যাগ যা টানতেই হিমশিম খেতে হয় কোমলমতি শিশুদের। বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষানীতিতে আনন্দময় পরিবেশে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপযোগী শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে স্কুলগুলোতে শিশুদের ওপর বই আর পড়ার চাপ ক্রমেই বাড়ছে। অভিভাবকরাও ছুটছেন ভালো রেজাল্টের দিকে।
একটি সাত বছরের বাচ্চা একবার তার অভিভাবককে বলেছিল যে “স্কুলে যাওয়ার মানে হল ডানায় আঘাত না হওয়া একটি পাখিকে আহত করা”। এই উপমার মধ্য দিয়ে বাচ্চাটি বোঝাতে চেয়েছিল যে শেখার আনন্দ বাচ্চারা উপভোগ করতে পারে না। কারণ শিক্ষক তার নিজের মতো করে শেখাতে চায় যেখানে শিক্ষার্থীদের পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
শেখার প্রক্রিয়ায় যখন বাচ্চারা পুরোপুরি অংশগ্রহণ করতে পারে তখনই তাদের কাছে শিক্ষা আনন্দের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তবে মনে রাখা ভালো যে, শিশুদের শেখার ধরনটা আলাদা। এক্ষেত্রে হাওয়ার্ড গার্ডনার-এর বক্তব্য খুবই উল্লেখযোগ্য- ”একটা বাচ্চা কতটা শিখল তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সেই শেখা তারা কীভাবে কোথায় প্রয়োগ করছে।”
যে সব বাচ্চারা প্রতিদিন স্কুলে যায় তাদের ক্ষেত্রে দিনের একটা বড় সময় কাটে ক্লাসরুম বা শ্রেণিকক্ষে। শিক্ষাদান এবং শিক্ষা পাওয়ার জন্য স্কুলের ক্লাসরুম একটা উপযুক্ত জায়গা। এই কারণে ক্লাসরুমে নিরাপদ, আনন্দময়ী এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্লাসরুমের দেয়ালগুলোতে ফুটে উঠবে তাদের কল্পনার রাজ্যের একাংশ। শিক্ষকদের হতে হবে বন্ধুর মতো যাতে করে তারা নির্দ্বিধায় তাদের সমস্যা, ইচ্ছা নিজের শিক্ষককে সবার আগে বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে।
আনন্দময়ী বিদ্যালয়ে কেতাবি শিক্ষা ছাড়াও খেলাধুলা ও আনুষঙ্গিক কার্যকলাপের উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকবে। খেলাধুলা, আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থা থাকবে শিক্ষার্থীদের জন্য। একটি বাচ্চা যেন নিজের বাসার বাইরে সকল আনন্দ, সকল খুশি তার স্কুল থেকে পেতে পারে। স্কুলের প্রতি যেন তার তৈরি হয় আলাদা মমতা। নিজের দ্বিতীয় বাড়ি যেন হয় তার আনন্দময়ী বিদ্যালয়টি।
লেখাটি নিয়ে মতামত