মুভি : চার্লি
ইন্ডাস্ট্রি : মালয়ালাম
কাস্ট : দুলকার সালমান, পার্বতী, অপর্ণা, নেডুমুডি বেনু, সৌবিন, চেম্বান, কল্পনা, উসমান ইক্কা।
রিপ ভ্যান উইংকেলের কথা মনে আছে? ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো সেই উইংকেল! বৌয়ের উপর বিরাগ নতুন কিছু না। সক্রেটিস তো আর এমনে এমনে দুনিয়ার সেরা দার্শনিক হন নি। রিপ ভ্যান দার্শনিক হতে পারেন নি ; কেবল বাড়ী থেকে পালিয়ে পাহাড়ের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। জাগলেন তো জাগলেন, দাড়ি ততদিনে বুকের নীচে নেমেছে। পাড়ায় ফিরে এসে সে কী নবাবী হালতে শুরু করলেন গল্প বলা।
ধান ভানতে শীবের গীতে কাজ নেই। গল্পটা চার্লির! মার্টিন প্রাক্কাতের চার্লি। আমাদের সবার কাছে অবশ্য দুলকার সালমানের চার্লি। রিপ ভ্যানের মতোই সে ও। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়ায়। বউ নেই দেখে বেচারার দার্শনিক হওয়া হয়নি।
রিপ ভ্যান যেমন পাড়া এক করে গল্পে মাততেন ; চার্লিও কুঞ্জিক্কাদের নিয়ে গল্পে মাততেন। রিপ ভ্যান শেষ দৃশ্যে এসে ফেলে আসা দিনের গল্প বলেছিলেন! বোহেমিয়ান চার্লি কুঞ্জিক্কার ফেলে আসা দিনকে আবার জোড়া লাগিয়েছেন। এই তো চার্লি!
তাঁকে বুকে নেয়া যায়, কিন্তু হাতে ছোঁয়া যায় না। সে টেস্সার কাছে প্রায় অধরাই থেকে যাচ্ছিলো। ঘর ছেড়ে পালিয়ে ছিলো টেস্সা ; উঠলো গিয়ে ভ্যাগাবন্ড চার্লির সাবেক ডেরায়। একগাদা জঞ্জাল আর একটা স্কেচবুক থেকেই গল্পের শুরু। কে নেই সে গল্পে! ছিঁচকে চোর সেখান থেকে সুইসাইড করতে যাওয়া ডক্টর, সুইসাইড করে ফেলা মারিয়া…. পরে আধা গল্পের রাধা হয়ে টেস্সার চার্লি ভ্রমণ! পুরো গল্পটা আপনি এক নিমিষে বলে ফেলতে পারেন, এক নিমিষে দেখেও ফেলতে পারেন। একবার দেখে আবার দেখে ফেলতে পারেন, তারপর আবার। বিরক্তি মোটেই আসে না। রবি ঠাকুরের হৈমন্তীর মত! বেশ সাদাসিধে! কিন্তু আপনি এ জিনিস এভয়েড করতে পারেন না কিছুতেই, কোনমতেই।
ক্যারেক্টার
চার্লি : সালমান না বলে চার্লিই বলি! এটা একদম সেঁটে গেছে। এই ছবি রিমেক হয়েছে। তাও মারাঠি এবং তামিলে! আর তাতেই পরিষ্কার হয়েছে চার্লি ইজ এ ‘ DQ ‘ শো! দৃশ্যমের মোহনলালের রিপ্লেস কমল হাসান হতে পারেন, চার্লিকে রিপ্লেস করা পসিবল না।
পার্বতী : ওরফে টেস্সা। গানের ভাষায় ‘ সুন্দরী পেন্নে’। গল্পের মুল চার্লি আর টেস্সার চুল ‘ কার্লি ‘। মালয়ালাম অভিনেত্রীরা সাউথের অন্য কাউন্টার পার্টের অভিনেত্রীদের মত ‘ শো-পিস ‘ না। পার্বতী তার প্রমাণ।
সৌভিন সাহির : এটা মালয়ালামেই হয় কেবল। এরা সাইড চরিত্র গুলোকেও এমন নিঁখুতভাবে প্রেজেন্ট করতে পারে। পুলিশ সাহিরকে ধাওয়া করছিলো ঐ দৃশ্যটা আবার একটু মনে ভাবুন তো। অথবা চার্লির হাত তালি দিয়ে বাতি নিভানোর দৃশ্যে সাহিরের এক্সপ্রেশন।
কুঞ্জিক্কা : অনেকেই এনাকে চেনেন না। নেডুমুডি বেনু। শংকর ইন্ডিয়ান সিনেমায় ছিলেন এই লোক। পরিচালক বদলায়, এঁদের অভিনয়ের ধার বদলায় না। যদিও প্রকৃত অর্থে নামটা ছিলো Kunjappa!
নাস্সার : ম্যাজিক দেখানোর সময় ‘ ভেগাম্বা ‘ ডাকটা মনে আছে তো? ছোট চরিত্র, আর ছোট একটা ডাকেই কাম তামাম। এছাড়াও, চেম্বান বিনোদ জোশ, কল্পনা ওরফে মারি, উসমান ইক্কা, ড. কানি সবাই তাদের সেরাটাই দিয়েছেন।
এ ছবির ‘ সুন্দরে পেন্নে ‘ আর ‘ ওরু কারু মুকিলিনু ‘ গান দুটো দুইবার শোনেন খালি। বারবার শুনতে থাকবেন। আর Pularikalo গানটা শোনেন, এর বিজিএমটা মোবাইলের রিংটোন সেট করার জন্য মন চাইবে নিশ্চিতভাবেই।
রেটিং
আইএমডিবি ৭.৯/১০ দিয়েছে। তবে অনুভূতির তো আসলে রেটিং হয় না, আমার পার্সোনাল রেটিং ৮.৫/ ১০।
কিছু মুভি অনুভূতি দিয়ে বিচার করতে হয়। চার্লি একটা ভ্রমণ, একটা অনুভূতি, একটা ভালোলাগার সরল আখ্যান। মুভি আমাদের কিছুই বদলে দেয় না। দেখার চোখ হয়তো খুলে দিতে পারে। এটুকুই।
লেখাটি নিয়ে মতামত