বারান্দায় প্রতিদিন নিয়ম করে একই সময়ে গাছে পানি দেয় শ্রাবণ। কাজটি ৮ বছর বয়সী শ্রাবণ ছাড়া অন্য কেউ করলে রেগে গিয়ে সবগুলো গাছ ভেঙে ফেলা ছাড়াও আরো অনেক আক্রমণাত্মক কাজ করে সে। এই বয়সের শিশুরা অফুরন্ত প্রাণশক্তির ভান্ডার। তারা দূরন্ত, চঞ্চলতাপূর্ণ, প্রশ্নমুখী, উড়ন্ত পাখির মত। কিন্তু এই অফুরন্ত প্রাণশক্তি সবার এক থাকে না। শ্রাবণের মত আরো অনেক শিশুই এমন কিছু অস্বাভাবিকতা নিয়ে বেড়ে উঠে। যেমন, চোখে চোখ রেখে কথা বলতে না পারা, কারো ডাকে সাড়া প্রদান না করা, সঠিক সময়ে কথা না বলতে পারা, একই কাজের পুনরাবৃত্তি করা, রুটিন মাফিক কাজ করার বিশেষ প্রবণতা, বয়স অনুযায়ী সামাজিক আচরণ করতে না পারা ইত্যাদি।
এছাড়াও আরো অনেক বুদ্ধিবৃত্তিক সমস্যা থাকে। এটি কোনো মানসিক রোগ নয়, মস্তিষ্কের একটি বিকাশগত সমস্যা, আর এগুলো একটি শিশুর দেড় থেকে তিন বছরের মাঝেই প্রকাশ পায়। এটির অন্যতম বড় কারণ বংশগত সমস্যা। বর্তমানে অনেক বাবা-মা, শিক্ষক এই বিষয় গুলোতে সচেতন হলেও তারা অনেকেই বুঝতে চান না যে এটি এক ধরণের সমস্যা। আর কেউ যদি জানেও তারা মনে করেন সব বাচ্চা থেকে তাকে আলাদা করে রাখা উচিত এবং তাই করে।
আমরা অটিজম বলতেই বুঝি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু। অর্থাৎ অটিজম চিহ্নিত শিশুর যত্ন নিতে হবে বিশেষভাবেই। বলে রাখা ভালো অটিজমের সম্পূর্ণ চিকিৎসা নেই। তবে সঠিক যত্ন ও সাহায্য-সহযোগিতা পেলে একটি অটিস্টিক শিশুকে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা স্বম্ভব। তাদের হাসিখুশি, সুন্দরভাবে চলার ক্ষেত্রে যেন কোনো বাধা না আসে সেদিকে খেয়াল রাখা, জোরপূর্বক কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দেওয়া।
অনেক সময় দেখা যায় অটিস্টিক শিশুদের কিছু বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা থাকে। এটিকে বলা হয় অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম। বাবা-মা বা শিক্ষক তার বিষয়ে সচেতন থাকলেই তার এই দক্ষতাকে আবিষ্কার করা সম্ভব। তার দক্ষতা অনুযায়ী তার পছন্দের কাজ করতে উৎসাহী করা যেমনঃ গান করা, ছবি আঁকা, খেলাধূলা ইত্যাদি ।
তারা কোনো আতঙ্কের বিষয় না, আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন তাদের জীবনকে করতে পারে সহজ, তাদের বোঝা না ভেবে ভালোবাসা ও সহানুভূতির মাধ্যমে সকলের উচিত তাদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করা এবং সুন্দর জীবন গড়ার সুযোগ দেওয়া। এতে এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা অনেক আত্মবিশ্বাসের সাথে বড় হতে থাকে।
লেখাটি নিয়ে মতামত